Delhi Assembly Election 2025

জয়ের হ্যাটট্রিক এখন ধূসর শীলালিপি, শূন্য হওয়ার হ্যাটট্রিকও করল কংগ্রেস! বিঁধছে ‘ইন্ডিয়া’ শরিকেরা

দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, ২০১৩ সালে শীলা দীক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েই দলের বস্তিবাসী, দলিত ও সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক চলে গিয়েছিল আপের কাছে। তা আর ফেরত আনা যায়নি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৫৪
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

দেশের রাজধানীতে আবার শূন্যহাতে কংগ্রেস। ২০১৫ থেকে এই নিয়ে পর পর তিন বার। ঘটনাচক্রে, ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত দিল্লিতে টানা তিনটি বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নজির গড়েছিল তারা। অর্থাৎ, জয়ের হ্যাটট্রিকের পরে এ বার দিল্লিতে শূন্যের হ্যাটট্রিক করল রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দল। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং সিকিমের বিধানসভা ভোটে শূন্যের হ্যাটট্রিক করার নজির রয়েছে কংগ্রেসের। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল দিল্লি।

Advertisement

এ বারের ভোটের ফলাফল বলছে, সাড়ে ৬ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছে ‘হাত’ প্রতীকে। গত বারের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ সন্দীপকে এ বার নয়াদিল্লি আসনে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস। জামানত হারিয়ে তৃতীয় স্থান পেয়েছেন তিনি। কালকাজি আসনে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনার বিরুদ্ধে লড়তে নেমে একই হাল প্রাক্তন আপ বিধায়ক তথা সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী অলকা লাম্বার। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৃষ্ণা তীরথ (পটেলনগর), দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দলের সংখ্যালঘু মুখ হারুন ইউসুফও (বল্লিমারন) জামানত খুইয়েছেন।

এমনকি, হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম) মাত্র দু’টি সংখ্যালঘু প্রধান আসন (মুস্তাফাবাদ এবং ওখলা) প্রার্থী দিয়ে দু’টিতেই টেক্কা দিয়েছে কংগ্রেসকে। তবে বদলি আসনে জামানত বাঁচিয়েছেন দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দেবেন্দ্র যাদব। কস্তুরবা নগরে দ্বিতীয় হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক দত্ত। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা বিঁধেছেন কংগ্রেসকে। দিল্লিতে ২৭ বছর পরে বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা স্পষ্ট হতেই জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে আরও লড়ুন!’’

Advertisement

লোকসভা ভোটে দিল্লিতে আপ-কংগ্রেস জোট হলেও এ বার দু’দল আলাদা লড়েছিল। রাহুল-সহ কংগ্রেস নেতারা কার্যত বিজেপির সুরেই ধারাবাহিক ভাবে নিশানা করেছিলেন কেজরী-সহ আপ নেতাদের। ওমরের ইঙ্গিত সে দিকেই বলে মনে করছেন অনেকে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি (এসপি) দিল্লির ভোটে আপকে সমর্থন করেছিল। অখিলেশ নিজে কেজরীর দলের হয়ে প্রচার করেছিলেন। আপের পক্ষে প্রচারে নেমেছিলেন তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্‌হাও। সমাজবাদী পার্টির প্রবীণ নেতা রামগোপাল যাদবের অভিযোগ, দিল্লিতে ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে কংগ্রেস।

২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস শূন্য হাতে ফিরেছিল মাত্র ৪.২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে। তার আগের বার, ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে প্রথম বার শূন্যে নেমে গেলেও সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল তারা। ২০১৩ সালের যে ভোটে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলার নেতৃত্বে লড়ে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তাতে তারা জিতেছিল আটটি বিধানসভা কেন্দ্রে। ওই ভোটে কেজরীর দল প্রথম লড়তে নেমেই সাড়ে ২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৮টি আসন জেতে! বিজেপি ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩২টি আসনে জিতে প্রথম হয়। সে সময় কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট। প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে প্রথম বার দিল্লিতে ক্ষমতা দখল করেছিল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শীলা। তার পর ২০০৩ এবং ২০০৮ সালের ভোটে শীলার নেতৃত্বেই জয়ের হ্যাটট্রিক করেছিল কংগ্রেস। ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে শীলা যে রাজধানীর ভোলবদলের কারিগর হিসেবে কাজ করেছিলেন, সে কথা দলমতনির্বিশেষে অনেকেই স্বীকার করেন। দিল্লি মেট্রো থেকে রাজধানীর গণপরিবহণে সিএনজি-চালিত গাড়ির প্রচলনের মতো নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় তাঁর আমলেই। দরিদ্র মানুষ থেকে শুরু করে নাইটক্লাবমুখী উচ্চবিত্ত, আধুনিকমনস্ক শীলা স্বচ্ছন্দ ছিলেন সকলের সঙ্গেই।

দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, ২০১৩ সালে শীলা মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েই কংগ্রেসের গরিব, বস্তিবাসী, দলিত ও সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক চলে গিয়েছিল কেজরীওয়ালের আপের কাছে। তা আর ফেরত আনা যায়নি। যদিও প্রয়াত শীলার অনুগামীরা তা মানতে রাজি নন। তাঁদের যুক্তি, ২০১৩ সালের নির্বাচনে তীব্র প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ায় হেরে গেলেও শীলার নেতৃত্বে লড়ে ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল দল। কিন্তু তার পরে তিনি দিল্লির রাজনীতি থেকে কার্যত সরে যাওয়ার ‘হাত’-এর ভোট (বিধানসভা নির্বাচনে) ১০ শতাংশের নীচে নেমে আসে। আর ২০১৯ সালে শীলার প্রয়াণের পরে কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে দিল্লি কংগ্রেস। ২০১৩-র ভোটের পরে ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় সরকার গড়তে কেজরীকে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের ‘বড় ভুল’ ছিল বলেও মনে করেন শীলার অনুগামীরা। এ সবেরই পরিণামে এক যুগের ব্যবধানে দিল্লিতে ধূসর হয়ে গেল শীলালিপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement