Delhi Assembly Election 2025

শনিবার দিল্লির ভোটগণনা: টগবগ করছে বিজেপি, বুথফেরত সমীক্ষার পর ম্রিয়মান কেজরীর দল

৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদু সংখ্যা’ ৩৬। কাগজে-কলমে ‘ত্রিমুখী’ ভোটযুদ্ধে গোড়া থেকেই ধারে-ভারে পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। মূল লড়াই আপ বনাম বিজেপি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৩০
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষাই এগিয়ে রেখেছে বিজেপিকে। দলের নেতাদের হাবেভাবেও আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট। অন্য দিকে, বুধবার ভোটপর্ব শেষের পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে নানা ‘অনিয়মের’ অভিযোগ তুলে চলেছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। যা আসলে দুশ্চিন্তার প্রতিফলন বলেই মনে করছেন অনেকে। এই আবহে শনিবার দেশের রাজধানীর ভোটগণনা ঠিক করে দেবে, গত দু’বারের মতো ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হবে আপ, না কি শেষ মুহূর্তে পিছন থেকে ব্যবধান কমিয়ে বাজিমাত করবে বিজেপি।

Advertisement

৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদু সংখ্যা’ ৩৬। কাগজে-কলমে ‘ত্রিমুখী’ লড়াইয়ে গোড়া থেকেই ধারে ও ভারে বেশ পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। কয়েকটি বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত, গত দু’বারের মতোই এ বারও সেখানে কংগ্রেস খাতা খুলতে পারবে না। অন্য কয়েকটি সমীক্ষার পূর্বাভাস, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গের দল দু’-একটি আসনে জিততে পারে। তবে বিজেপির নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতার সম্ভবনা নিয়ে প্রায় সবক’টি সমীক্ষাই নিঃসংশয়।

তবে এই ধরনের সমীক্ষা কখনওই শেষ কথা বলে না। বহু সময়ে বাস্তব ফল যে সমীক্ষার সঙ্গে মেলে না, তা-ও প্রমাণিত। বস্তুত, ছ’মাস আগে দিল্লির পড়শি হরিয়ানার ক্ষেত্রেই তা হয়েছে। তবু, সাধারণ প্রবণতা হিসেবে এই ধরনের সমীক্ষা স্বীকৃত। গত দু’বারের বিধানসভা নির্বাচনে (২০২০ এবং ২০১৫) কেজরীর বিরুদ্ধে কার্যত দাঁড়াতে পারেনি বিজেপি। অথচ, এ বারের (২০২৪) মতোই গত দু’বারও (২০১৯ এবং ২০২৪) লোকসভা ভোটে দিল্লির সাতটি আসনই দখল করেছিল তারা। বিধানসভার মাস দশেক আগে যাওয়া সেই লোকসভা নির্বাচনগুলি হয়েছিল।

Advertisement

অষ্টম বেতন কমিশন, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছাড় ও ঝুপড়িবাসীদের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেওয়ার ঘোষণা শেষ প্রহরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দলের পালে হাওয়া জুগিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। বিশেষ করে আয়কর ছাড়ের সিদ্ধান্তে সরকারি কর্মচারী ও যুবসমাজের ভোটের বড় অংশ বিজেপির পক্ষে যেতে পারে। তাঁদের মতে, সেই হাওয়ায় ভর করে বিধায়কসংখ্যার হিসাবে আপের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেই প্রয়োজনীয় বিধায়ক ‘জোগাড়’ করে ক্ষমতার দখল নেবে পদ্ম-শিবির।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অতীতে প্রধানমন্ত্রী মোদী খয়রাতির রাজনীতির বিরোধিতা করলেও, দিল্লি দখলের দৌড়ে আপ ও কংগ্রেসের মতোই মহিলাদের হাতে নগদ তুলে দেওয়ার মতো জনমোহিনী ঘোষণা করতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। পাশাপাশি, দলের জোড়া ‘সঙ্কল্প পত্রে’ (নির্বাচনী ইস্তাহার) সরকারি স্কুলে কেজি (কিন্ডার গার্টেন) থেকে পিজি (পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন) পর্যন্ত নিখরচায় পড়তে পারবেন গরিব পড়ুয়ারা। পিছিয়ে থাকা সমাজের পড়ুয়াদের মাসিক হাজার টাকার বৃত্তি, চাকরির পরীক্ষার্থীদের ১৫ হাজার টাকা এককালীন সাহায্য, অটোচালকদের জন্য বিনামূল্যে বিমার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

অন্য দিকে এ বার সম্ভবত জীবনের কঠিনতম লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে চলেছেন কেজরীওয়াল। কারণ, রাজনীতিকদের মতে যে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির কথা বলে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন, আবগারি মামলায় গ্রেফতারির পরে তা ফিকে হয়ে গিয়েছে। জেলে বসে সরকার চালানোর নজির গড়ার পরেও ইস্তফা দিয়ে ভোটের পাঁচ মাস আগে আতিশী মার্লেনার হাতে মুখ্যমন্ত্রিত্ব তুলে দিতে হয়েছে আপের প্রতিষ্ঠাতা-প্রধানকে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিপুল সরকারি খরচে কেজরীর ‘শিসমহল নির্মাণ’ নিয়ে মোদীর পাশাপাশি ‘ইন্ডিয়া’র শরিক কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীও কটাক্ষ করেছেন। গোটাটাই ‘বিজেপির ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করলেও, দিল্লিবাসীর কতটা ভরসা কেজরীর উপরে রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে শনিবার।

দিল্লির ভোটে এ বারেও খয়রাতিতেই ভরসা রেখেছেন কেজরী। মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরিব, ঝুপড়িবাসীদের সমর্থন পেয়ে থাকে আপ। সেই ভোট পেতে বিজেপি এ বার বিপুল অর্থ ঢালছে বলে ভোটের আগে আপ নেতৃত্ব বারে বারে অভিযোগ তুলেছেন। এ বিষয়ে কেজরী স্বয়ং মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারকে নিশানা করেছেন। চলতি মাসে অবসরের পরে রাজীবকে অন্য কোনও ‘লোভনীয় পদে’ পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। গণনার আগের দিন কেজরী-সহ আপ নেতৃত্বের অভিযোগ, তাঁদের সম্ভাব্য জয়ী প্রার্থীদের ১৫ কোটি টাকার ‘টোপ’ দিয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে অতীতে দিল্লির ভোটে বুথফেরত সমীক্ষা এবং প্রকৃত ফলের উদাহরণ তুলে কেজরীদের দাবি, প্রতি ক্ষেত্রেই ভোট এবং আসন বেড়েছিল তাঁদের। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement