প্রতীকী ছবি।
নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পকে একটি ‘বিশাল কেলেঙ্কারি’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে এটি বন্ধের দাবি জানাল কংগ্রেস। আজ প্রকাশিত খবরের উল্লেখ করে কংগ্রেসের অভিযোগ, নির্বাচনী বন্ড আসলে টাকা দাও, সুবিধা নাও— এমন লেনদেনের ব্যবস্থা ছাড়া কিছু নয়। বিজেপি স্বচ্ছতার কথা বলে। কাজে করে ঠিক উল্টো।
সনিয়া গাঁধীর দল গত কালও অভিযোগ করেছে, দলের তহবিলে কালো টাকা টানতেই এই বন্ড চালু করেছে বিজেপির সরকার। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে কারা কত টাকা দিয়েছে, তা প্রকাশ করার দাবি জানায় তারা। টুইটেও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। বন্ডের ব্যাপারে সরকারের ভুমিকা নিয়ে আজ খবর প্রকাশিত হলে, তা আলোড়ন ফেলে। এর পরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেসের দুই মুখপাত্র, গৌরব গগৈ ও সুপ্রিয়া শ্রীনেত।
নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এই বন্ড নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে বিরোধীরা। অভিযোগ উঠেছে, এই বন্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশন যে আপত্তি জানিয়েছিল, সেই বিষয়টি নরেন্দ্র মোদীর সরকার চেপে যায় সংসদে। সংসদে অসত্য বলার জন্য মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছিল অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব। তড়িঘড়ি তা-ও ধামাচাপা দেয় সরকার। তথ্যের অধিকার আইনে এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর প্রশ্নের সূত্রে পাওয়া তথ্যের সূত্রে সামনে এসেছে বিষয়টি।
আরও পড়ুন: উপত্যকায় সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন শালওয়ালাদের
২০১৮-র শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভার সদস্য মহম্মদ নাদিমুল হক প্রশ্ন করেছিলেন, নির্বাচন কমিশন কি নির্বাচনী বন্ড নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলেছে? জবাবে তৎকালীন অর্থ প্রতিমন্ত্রী পি রাধাকৃষ্ণন জানান, কমিশনের তরফে সরকারকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এর পরে সংসদে অসত্য বলার জন্য অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনেন নাদিমুল। একটি খবরের ওয়েবসাইটের দাবি, তাদের হাতে কিছু নথি রয়েছে, যাতে অন্তত তিনটি বিষয় স্পষ্ট। এক, রাধাকৃষ্ণনকে বাঁচাতে তিন জন শীর্ষ স্তরের আমলা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে প্রায় দুর্বোধ্য ছ’টি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। দুই, শীর্ষ স্তরের আমলারা জেনেবুঝে নির্বাচন কমিশনকে বন্ডের ব্যাপারে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও তাঁদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিন, সরকার বন্ড নিয়ে বিরোধীদের মতামত জানাতে বলেছিল স্রেফ লোক দেখাতে। সেই মতামত জানার অপেক্ষা না-করেই এই বন্ড চালু করার প্রস্ততি চালিয়ে গিয়েছিল। এমনকি কমিশনের তোলা প্রশ্নগুলিকে উপেক্ষা করেই।
প্রশ্ন উঠেছে, কিসের এত তাড়া ছিল তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর?
সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস মুখপাত্ররা দাবি করেন, ২০১৭-তেই নির্বাচন কমিশন এই বন্ডের বিষয়ে তাদের আশঙ্কা ও আপত্তির কথা জানিয়েছিল আইন ও বিচার মন্ত্রককে। ফাইল যায় মন্ত্রকের অর্থনীতি বিষয়ক দফতরে। সেই দফতরের কর্তারা কমিশনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। কিন্তু আপত্তিগুলি রয়েই যায়। এ বিষয়ে ‘আইন ও বিচার মন্ত্রকের সচিবকে লেখা নির্বাচন কমিশনের একটি চিঠির’ শেষ লাইন পড়ে শোনান কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব। তাতে বলা হয়েছিল, ‘‘দানের স্বচ্ছতার প্রশ্নে এটা পিছন দিকে হাঁটা। বিজেপি সরকার যা বলছে, তার ঠিক উল্টো।’’ কংগ্রেসের অভিযোগ, ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২৯বি ধারা লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও জানিয়েছিল কমিশন। কান দেয়নি সরকার। এবং এত সব নথি থাকা সত্ত্বেও প্রতিমন্ত্রী রাধাকৃষ্ণন রাজ্যসভায় বলে দেন, বন্ড নিয়ে সরকারের প্রস্তাবে কখনওই আপত্তি জানায়নি কমিশন।