সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতারা দলের সমস্ত পদে নির্বাচনের দাবি করলেও আপাতত শুধু দলের সভাপতি পদেই নির্বাচন হবে।
শনিবার থেকে সনিয়া গাঁধী কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক শুরু করছেন। আগামী ১৫ দিন দফায় দফায় বৈঠক করবেন তিনি। গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, শশী তারুরের মতো ২৩ জন ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা সনিয়াকে চিঠি লিখে দলের হালচাল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। শনিবারের প্রথম বৈঠকে মনমোহন সিংহ, এ কে অ্যান্টনি, অশোক গহলৌত, কমল নাথ, পি চিদম্বরমদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ নেতাদের প্রধান মুখদেরও বৈঠকে ডাকা হচ্ছে। রাহুল নিজেও বৈঠকে থাকবেন। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। কংগ্রেসের নির্বাচনী রণকৌশলের পাশাপাশি সনিয়ার ধারাবাহিক বৈঠকে সভাপতি পদে নির্বাচন, সাংগঠনিক রদবদলের প্রসঙ্গও আসবে।
তার আগে শুক্রবার গাঁধী-পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন কংগ্রেস সভাপতি ঠিক হয়ে যাবে। সনিয়াকে লেখা চিঠিতে বিক্ষুব্ধ ২৩ জন নেতার এটাই প্রধান দাবি ছিল। সভাপতি পদে নির্বাচন হবে আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।’’ বিহারে কংগ্রেসের খারাপ ফলের পরে গুলাম নবি দাবি তুলেছিলেন, সংগঠনের সব পদেই নির্বাচন দরকার। তা হলেই নেতাদের দায়বদ্ধতা ফিরে আসবে। ঘটনাচক্রে এ দিনই গোয়া পঞ্চায়েত ভোটে খারাপ ফলে দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন সেখানকার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গিরীশ ছোড়গাঁওকর। গাঁধী পরিবারের ওই ঘনিষ্ঠ নেতার জবাব, ‘‘রাহুল সভাপতি হওয়ার পরে এই গুলাম নবিই বলেছিলেন, তাঁকেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হোক। আপাতত সভাপতি পদে নির্বাচনের প্রক্রিয়াই শুরু হচ্ছে। খুব বেশি হলে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচন হতে পারে। তবে এখনই সে সম্ভাবনা কম।’’
কংগ্রেসের অন্দরমহলে এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন, রাহুল ফের সভাপতি পদে রাজি হবেন কি না। বিক্ষুব্ধ নেতাদের ধারণা, রাহুল নিজে সভাপতি হবেন না। গাঁধী পরিবার অশোক গহলৌত বা মুকুল ওয়াসনিকের মতো কাউকে সভাপতি পদে নিয়ে আসতে চাইবে। সে ক্ষেত্রে ‘রাহুল-বিরোধী’ শিবির কী করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আহমেদ পটেলের প্রয়াণের পরে সনিয়া কমল নাথকে কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষের পদে চাইছেন বলে সূত্রের খবর। কারণ তাঁর সঙ্গে শিল্পমহলের সম্পর্ক মধুর। ‘টিম রাহুল’ অবশ্য আশাবাদী, তিনি শেষ পর্যন্ত রাজি হবেন। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘এআইসিসি সদস্য তথা কংগ্রেসের কর্মী, সদস্যরাই ঠিক করবেন, কে সভাপতি পদে যোগ্য। তবে আমার মতো কংগ্রেসের ৯৯.৯৯ শতাংশ সদস্যই চান, রাহুল গাঁধী সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিন।’’
বিক্ষুব্ধ নেতাদের মূল অভিযোগ ছিল, রাহুল নিজের আস্থাভাজন ছাড়া বাকিদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি সামনে থেকে দায়িত্ব নিতে নারাজ। কিন্তু পিছন থেকে তিনিই সব নিয়ন্ত্রণ করছেন। আবার যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে মাঠেও নামছেন না। কিছু দিন হইচই করে ফের উধাও হয়ে যাচ্ছেন। রাহুল শিবিরের এক নেতার পাল্টা জবাব, ‘‘বিক্ষুব্ধরা চাইলে সভাপতি পদে রাহুলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে পারেন। তার আগে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকে গুলাম নবি, আনন্দ শর্মাকে বলতে হবে, মোদী সরকার সংসদের শীতকালীন অধিবেশন না ডাকায় তাঁরা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা, উপ-দলনেতা হিসেবে কী করলেন। তারুরকে বলতে হবে, কেরলে কংগ্রেস কী ভাবে বামেদের বিরুদ্ধে লড়বে।
তামিলনাড়ুর নেতাদের বলতে হবে, ডিএমকে-র সঙ্গে আসন রফায় যাওয়ার আগে দল কতগুলো আসনে লড়ার ক্ষমতা রাখে।’’ কোভিড পরিস্থিতিতে সনিয়া এত দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সে কিছু বৈঠক করেছেন। ২০২১-এর গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভোটমুখী রাজ্যগুলির সঙ্গে রাহুল ভিডিয়ো কনফারেন্স করেছেন। শনিবার থেকে অবশ্য সনিয়ার দশ জনপথের বাসভবনে বৈঠক হবে।