গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
হরিয়ানার সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের তোলা কারচুপির অভিযোগ গত মঙ্গলবার খারিজ করেছিল নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি, কমিশনের তরফে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগ’ তোলার জন্য রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গের দলকে সতর্কও করা হয়েছে। শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে কমিশনকে পাল্টা আক্রমণ করল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হল।
কমিশনের তরফে কংগ্রেসের অভিযোগ খারিজ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‘এ ধরনের অমূলক, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আমজনতার মধ্যে অস্থিরতা এবং অবাঞ্ছিত অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। যার পরিণামে সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যাহত হতে পারে।’’ নির্বাচন কমিশনের জবাব দেওয়ার ভাষা নিয়েই শুক্রবার সরাসরি প্রশ্ন তোলা হয়েছে এআইসিসির তরফে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারকে পাঠানো চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘নিরপেক্ষতার পথ থেকে সরে আসাই যদি কমিশনের লক্ষ্য হয়, তবে বলতেই হবে তারা উল্লেখযোগ্য কাজ করছে!’’ সেই সঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘‘নির্বাচন কমিশনের জবাবি ভাষার যদি এই নমুনা হয়, তা হলে আইনের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া বিকল্প পথ খোলা থাকবে না।’’
গত ৮ অক্টোবর হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে গণনায় হারের পরেই সাতটি আসনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস। পরে আরও ছ’টি আসনে কারচুপি হয়েছে বলে কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়। গণনার সময় অনেক ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটের ব্যাটারি লেভেল ৯৯ শতাংশ দেখাচ্ছিল বলে কংগ্রেস নেতা বীরেন্দ্র সিংহ দাবি করেছিলেন। বেশ কয়েক জন নির্বাচনী এজেন্টকে ফর্ম ১৭সি-র অনুলিপি আনতে দেওয়া হয়নি, এমনকি, গণনা এজেন্টদের প্রাপ্ত ভোট মিলিয়ে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
ঘটনাচক্রে, যে ১৩টি আসন নিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ, তার মধ্যে ১২টিতেই এ বার জিতেছে বিজেপি। যদিও অভিযোগে কর্ণপাত করতে রাজি হয়নি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের দফতর। মঙ্গলবার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‘নির্বাচন কমিশন সরাসরি হরিয়ানা রাজ্য বিধানসভার সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে ভোট প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে কংগ্রেসের তোলা সমস্ত ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং আশঙ্কা খারিজ করেছে।’’ এমনকি, অতীতেও কংগ্রেস বিভিন্ন নির্বাচনে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে বলে কমিশনের অভিযোগ। কমিশনের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর আস্থাহীনতার এমন অভ্যাস ঠিক নয়।’’
প্রসঙ্গত, এ বারের ভোটে ৯০ আসনের হরিয়ানা বিধানসভায় ৪৮টি আসনে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। টানা এক দশক ক্ষমতায় থাকার পরেও ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া’ অতিক্রম করে হরিয়ানায় জয়ের হ্যাটট্রিকের নতুন নজির গড়েছে পদ্মশিবির। প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস জিতেছে ৩৭টিতে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালার ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল (আইএনএলডি) দু’টি এবং নির্দল প্রার্থীরা তিনটি আসনে জিতেছেন। গত মার্চে পঞ্জাবি জনগোষ্ঠীর নেতা খট্টরকে সরিয়ে দলে অনগ্রসর (ওবিসি) ‘মুখ’ সাইনিকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। এ বারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’দলই হরিয়ানায় পাঁচটি করে আসনে জিতেছিল। তাই প্রাথমিক ভাবে সাইনির লড়াই ‘কঠিন’ মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ১ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে নির্ধারিত হয়েছে জয়-পরাজয়।