কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।
আটচল্লিশ বছর আগে এই মাসে জারি হয়েছিল জরুরি অবস্থা। ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্বে জারি হওয়া সেই জরুরি অবস্থার কথা তুলে ধরে আজ ফের সরব হলেন বিজেপি নেতৃত্ব। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী যেমন জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ তোলেন, তেমনই লখনউয়ে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানের জরুরি অবস্থা চলাকালীন নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
সাধারণত মাসের শেষ রবিবারে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আগামী রবিবার তাঁর পূর্বনির্ধারিত আমেরিকা সফর রয়েছে। তাই আজই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়। সেই অনুষ্ঠানেই জরুরি অবস্থা প্রসঙ্গ তোলেন মোদী। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইস্তক সেই প্রসঙ্গটি প্রতি বছরই তোলেন মোদী। প্রতি বছরই ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে জরুরি অবস্থা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি।
আজ ১০২তম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেও মোদী বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের জন্ম হয়েছিল ভারতে। যে কারণে ২৫ জুন দিনটি কোনও ভাবেই ভোলা সম্ভব নয়। কারণ ওই দিনে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। যা এ দেশের ইতিহাসের অন্যতম অন্ধকার অধ্যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে ওই জরুরি অবস্থার প্রতিরোধ করেছিলেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক সেই কন্ঠস্বরকে দমাতে সে সময়ে যে অত্যাচার চালানো হয়েছিল, তা মনে করে আজও মন কেঁপে ওঠে। বর্তমান সময়ে যখন আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করছি, তখন আমাদের অতীতের সেই অপরাধের কথাও মাথায় রাখা উচিত। যা আমাদের নবীন প্রজন্মকে গণতন্ত্রের অর্থ ও গুরুত্বকে বোঝাতে সাহায্য করবে।’’
অন্য দিকে, আমলা হতে ইচ্ছুক এমন একটি পড়ুয়াদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লখনউয়ে যান রাজনাথ সিংহ। সেখানে তিনি দাবি করেন, জরুরি অবস্থার সময়ে তিনি কংগ্রেস-বিরোধী রাজনীতি করতেন। সেই কারণে তাঁকে আঠারো মাস জেলে থাকতে হয়েছিল। রাজনাথ বলেন, ‘‘ছাত্রাবস্থায় আমি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে যোগ দিয়েছিলাম। যা আমায় পরে সক্রিয় রাজনীতিতে টেনে আনে। জরুরি অবস্থার সময়ে আমার বয়স ছিল ২৩ বছর। জরুরি অবস্থা জারি হলে আমিও আন্দোলনে যোগদান করেছিলাম। সেই কারণে আমায় জেলে পোরা হয়েছিল ১৮ মাসের জন্য। ফলে আইএএস হওয়ার পরিকল্পনা বিসর্জন দিতে হয়। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে এসে জানতে পারি, ২৫ বছর বয়েসেই আমি লোকসভায় লড়ার টিকিট পেয়েছি।’’
আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে জরুরি অবস্থা ছাড়াও পশ্চিম উপকূলে বিপর্যয় সাইক্লোনের সফল ভাবে মোকাবিলা করায় কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের প্রশংসা, বিভিন্ন খেলায় ক্রীড়াবিদদের সাফল্যে নিয়েও মুখ খোলেন মোদী। কিন্তু মণিপুরে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে লাগাতার অশান্তি, মৃত্যু চলছে, তা নিয়ে এ দিনও একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি। কেন তিনি মণিপুর নিয়ে মৌন, সেই প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘মণিপুর নিয়ে আপনাদের গা-ছাড়া মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, ওই রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্তই নয়! ‘মন কি বাত’ করার আগে ‘মণিপুর কি বাত’ হওয়া উচিত। কিন্তু এই সরকার ঘুমোচ্ছে। যারা গোলমাল বাধাচ্ছে, রাজধর্ম পালন করে তাদের গ্রেফতার করে ওই রাজ্যে শান্তি ফেরান।’’