কংগ্রেস সভাপতি ভোটে লড়তে পারেন দিগ্বিজয় সিংহ। ফাইল চিত্র।
আড়াই দশক পরে ফের ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত এবং কেরলের সাংসদ শশী তারুরের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহও লড়তে পারেন সভাপতি নির্বাচনে। এআইসিসির একটি সূত্র জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার ভোটে লড়ার জন্য মনোনয়ন তুলতে পারেন দিগ্বিজয়।
বুধবার বিকেলে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দলের প্রবীণ নেতা এ কে অ্যান্টনির বৈঠকেও গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ দিগ্বিজয়ের ভোটে লড়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ দিগ্বিজয় ১৯৯৩-২০০৩, টানা ১০ বছর মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তবে তার দেড় দশক পর ২০১৯ সালে ফের নির্বাচনী রাজনীতিতে ফিরে ভোপাল লোকসভা থেকে ফের ভোটে লড়ে হেরে যান তিনি। প্রসঙ্গত, এর আগে ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে শেষ বার ত্রিমুখী লড়াই দেখা গিয়েছিল। শরদ পওয়ার এবং রাজেশ পাইলটকে হারিয়ে সে বার জিতেছিলেন সীতারাম কেশরী।
কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর, দক্ষিণ ভারতে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ চলাকালীন গহলৌত অনুগামী রাজস্থানের কংগ্রেস বিধায়কদের ‘দলবিরোধী’ আচরণে ক্ষুব্ধ সভানেত্রী সনিয়া। ঘনিষ্ঠ নেতাদের নাকি সে ‘বার্তাও’ দিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সভাপতি পদের দৌড়ে নামলেও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী গান্ধী পরিবারের সমর্থন না-ও পেতে পারেন বলে ওই সূত্রের দাবি।
যদিও রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গহলৌতের কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি হওয়া এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। কিন্তু সভাপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে তাঁকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলায় তাঁর অনুগামীরা বিদ্রোহ করেন। রবিবার রাতে জয়পুরে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ না দিয়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। দাবি তোলেন, সচিন পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী করা যাবে না। গহলৌত কংগ্রেস সভাপতি হলে তাঁর অনুগামী কাউকেই রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে। এআইসিসি নিযুক্ত দুই পর্যবেক্ষক মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং অজয় মাকেনের সঙ্গেও ‘বিদ্রোহী’ বিধায়কেরা দেখা করেননি। এই পরিস্থিতিতে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে গহলৌতের ঘনিষ্ঠ তিন নেতা— রাজস্থানের নগরোন্নয়ন, আবাসন ও পরিষদীয় মন্ত্রী শান্তি ধারিওয়াল, কংগ্রেস পরিষদীয় দলের চিফ হুইপ মহেশ জোশী এবং রাজ্য পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান ধর্মেন্দ্র পাঠককে শোকজ নোটিস পাঠানো হয়েছে এআইসিসির তরফে।
প্রসঙ্গত, সনিয়ার উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার জন্য কংগ্রেসে আগামী ১৭ অক্টোবর ভোট হওয়ার কথা। ভোটগণনা ১৯ অক্টোবর। ২৪ থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়ন তোলা ও জমা দেওয়ার কাজ। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। মনোনয়ন পরীক্ষা হবে ১ অক্টোবর। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ অক্টোবর। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইচ্ছুক প্রার্থীদের মনোনয়পত্র তুলতে হবে নয়াদিল্লির ২৪ আকবর রোডের এআইসিসি সদর দফতর থেকে। তবে প্রতিটি রাজ্যেই থাকবে ভোটদানের ব্যবস্থা।
কংগ্রেসের সাংগঠনিক বিধির ১৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সর্বসম্মতিক্রমে কেউ সভাপতি হিসাবে মনোনীত হলে, কিংবা একের বেশি প্রার্থী না থাকলে নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না। যদিও কিন্তু বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে, শেষ পর্যন্ত ২২ বছর পরে ফের কংগ্রেসের শীর্ষ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় সীতারাম কেশরীর বদলে এক জায়গায় সীতারাম ইয়েচুরি লেখা হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)