সংসদে অধীরের শাস্তি, পাশে সৌগত-সেলিম

রেগেমেগে এক বার লোকসভার স্পিকারের দিকে শাল ছুড়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে আর এক বার কাগজ কুচি কুচি করে ছুড়ে দিয়েছিলেন স্পিকারের দিকে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৫
Share:

রেগেমেগে এক বার লোকসভার স্পিকারের দিকে শাল ছুড়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে আর এক বার কাগজ কুচি কুচি করে ছুড়ে দিয়েছিলেন স্পিকারের দিকে! আজ সংসদীয় শিষ্টাচারের বেড়া টপকে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের আর এক সাংসদ। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। লোকসভার ওয়েল থেকে দু’ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের উদ্দেশে চিৎকার করা ও সভায় প্ল্যাকার্ড দেখানোর জন্য আজকের জন্য সাসপেন্ড করা হয় তাঁকে।

Advertisement

তবে ঘটনা শুধু এটুকু নয়! গোটা পর্বে রাজনীতির চমকও কম নয়। স্পিকারের অবমাননা করার দায়ে অধীরকে গোটা বাদল অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করতে চেয়ে প্রস্তাব এনেছিল বিজেপি। কিন্তু সেটাকে কংগ্রেস সাংসদের প্রতি শাসক দলের ‘প্রতিহিংসাপূর্ণ আচরণ’ আখ্যা দিয়ে রুখে দাঁড়ায় তৃণমূল এবং সিপিএম! প্রথমে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। এর পরে সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। এতে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধিতার নতুন এক অক্ষও দেখতে শুরু করেছেন কেউ কেউ! অনেকের এ-ও মত, সৌগতর তৎপরতা একেবারে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ হিসেবে দেখলে হয়তো ভুল হবে। কারণ, মমতা বুঝতে পারছেন বিজেপি বিভিন্ন ভাবে তাঁকে চাপে রাখতে চাইছে। তাই সংসদে ক্রমশ কেন্দ্র-বিরোধিতায় সুর চড়াতে শুরু করেছে তৃণমূল। আবার সীতারাম ইয়েচুরি দলের নেতৃত্বে আসার পরে সংসদে কংগ্রেস-সিপিএম সখ্যও এখন বেশ ভাল।

বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ইস্তফার দাবিতে কংগ্রেস সাংসদরা আজও সকাল থেকে লোকসভার ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে শুরু করেছিলেন। স্পিকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাঁদের অনেকের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। কিন্তু এই গোলমালের মধ্যেও যত দূর সম্ভব সভা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার। যদিও শেষমেশ সভা এক বার মুলতবি করতেই হয়। দুপুর দু’‌টোয় অধিবেশন ফের শুরু হলে কংগ্রেস সাংসদরা যথারীতি হট্টগোল শুরু করে দেন। সনিয়া ও রাহুল গাঁধীও তখন সভায় ছিলেন। স্পিকার এর মধ্যেই তফসিলি জাতি, উপজাতি সংক্রান্ত বিল নিয়ে আলোচনা চালানোর নির্দেশ দেন। হট্টগোলের মধ্যে বিল পাশের চেষ্টা শুরু হতেই অধীর ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া আপত্তি জানান। বাকি কংগ্রেস সাংসদরা কেউ প্ল্যাকার্ড তুলে ক্যামেরা থেকে স্পিকারের মুখ আড়াল করে দেন, কেউ-বা বিতর্কে অংশগ্রহণকারীদের সামনে প্যাকার্ড তুলে ধরেন। তবে এঁদের মধ্যে অধীর ছিলেন অন্যদের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক। এক সময় এক হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে তিনি স্পিকারের আসনের সামনে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যান। তাঁকে চিৎকার করে এ-ও বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনি স্বৈরাচারীর মতো সভা চালাচ্ছেন (যদিও সে কথা সংসদের রেকর্ডে রাখা হয়নি)।’’ কিন্তু এতে স্পিকারের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। তিনি সভা এক ঘণ্টার জন্য মুলতবি করে দেন।

Advertisement

বিকেল চারটেয় সভা ফের শুরু হতেই তাঁকে অবমাননা করার জন্য অধীরকে সতর্ক করেন স্পিকার। সঙ্গে সঙ্গে অধীরকে গোটা অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করার প্রস্তাব আনেন বিজেপির অর্জুন মেঘওয়াল। তাতে আপত্তি জানান তৃণমূলের সৌগত। স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘শুধু এক জন সাংসদই স্লোগান তুলছিলেন এমন নয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, টিআরএসের সাংসদরাও স্লোগান তুলছিলেন। তাই কেবল এক জন সাংসদকে দায়ী করলে ভুল হবে। সরকার পক্ষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যে ভাবে এক জন সাংসদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চাইছে তা ঠিক নয়। স্পিকার এ ব্যাপারটাকে সমর্থন করলেও ঠিক হবে না।’’ সৌগতর যুক্তি ছিল, রাজনৈতিক কারণে সংসদে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবেই তার মীমাংসা হতে পারে। কাউকে শাস্তি দিয়ে মীমাংসা সম্ভব নয়। বরং অধীর চৌধুরীকে এক বার দুঃখপ্রকাশের সুযোগ দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা ভাল। সিপিএম সাংসদ সেলিমও একই মত প্রকাশ করেন। স্পিকারের উদ্দেশে কিছুটা অসন্তোষও প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘‘এটা ভ্যাটিকান সিটি নয়, আপনিও পোপ নন।’’

এই পরিস্থিতিতে স্পিকার অধীরবাবুকে বলার সুযোগ দেন। বহরমপুরের চার বারের সাংসদ বলেন, ‘‘এত দিন ধরে সংসদে রয়েছি, কখনও স্পিকারের অবমাননা করিনি। যে বিলটি নিয়ে আলোচনা চলছিল, তাতে বিতর্কে অংশগ্রহণের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হট্টগোলের মধ্যে বিল পাশের চেষ্টা হচ্ছে দেখে, উত্তেজিত হয়ে পড়ি। তবে যা করেছি তার জন্য নিঃশর্তে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’ নাছোড় বিজেপি দাবি করে, শুধু এটুকু বললে হবে না। ভবিষ্যতে এই রকম আর হবে না, সেই প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে। কিন্তু তাতে রাজি হননি কংগ্রেস নেতারা।

কিন্তু অধীরের ওই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হননি স্পিকার। বলেন, ‘‘এ রকম ক্ষমা চাই না। মন থেকে ক্ষমা না চাইলে আবার কীসের ক্ষমা! সংসদে যে ধরনের আচরণ হচ্ছে, তা অন্তত দুঃখজনক। শুধু যে প্ল্যাকার্ড দেখানো হচ্ছে তা নয়, অন্য সাংসদের অধিকারও হনন করা হচ্ছে। আজ যা হয়েছে তা খুবই কটূ এবং অধীর চৌধুরীকে আজকের জন্য সভা ছেড়ে যেতে বলছি।’’ স্পিকারের এই নির্দেশ শুনে অধীর সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু এর পরেও যে সভা সুষ্ঠু ভাবে চলেছে, তা-ও নয়। স্পিকার সভা চালাতে গেলে, কংগ্রেস সাংসদরা ফের স্লোগান তুলতে শুরু করেন। ফলে সভা মুলতবি করে দিতে হয়।

তবে সভা চলা, না-চলা, অধীরের শাস্তি নিয়ে দিনভর এই নাটকের ঊর্ধ্বে থেকে গেল তৃণমূল এবং সিপিএমের একযোগে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোর ঘটনা। যদিও তৃণমূলের কয়েক জন সাংসদের দাবি, সৌগতবাবু ওটা স্বভাবগত ভাবে করেছেন। উনি বরাবর সাংসদদের অধিকারের জন্য সওয়াল করেন। আর সৌগত বলেন, ‘‘সংসদে যা হয়েছে তা সংসদের বিষয়। রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement