অর্থনীতি ভাঙছে, প্রধানমন্ত্রী নজর ঘোরাচ্ছেন, বৈঠক শেষে বললেন রাহুল

বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সিএএ-এনআরসি বিরোধিতার প্রশ্নে এক হতে পারল না বিরোধীরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:৫৫
Share:

বৈঠক শেষে বিরোধী দলের নেতারা। রয়েছেন রাহুল গাঁধী, প্রকাশ কারাট, হেমন্ত সোরেন, গুলাম নবি আজাদ, সনিয়া গাঁধী। ছবি: পিটিআই

দেশের অর্থনীতির অবস্থা সঙ্গীন। কী করে দেশে রোজগার বাড়বে, এই ব্যাপারে কোনও উত্তর নেই প্রধানমন্ত্রীর কাছেও। তাই তারা নজর ঘোরাচ্ছেন। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আয়োজিত বিরোধী বৈঠক থেকে বেরিয়ে এ কথাই বললেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। বিজেপি ক্ষমতাসীন নয় এমন রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক থেকে অনুরোধ করা হল, এনআরসি,এনপিআর-এর কাজ শুরু না করতে।

Advertisement

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রণকৌশল ঠিক করতে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর ডাকে সোমবার বিরোধীদের বৈঠক বসল। উদ্দেশ্য ছিল, দেশের বর্তমান বর্তমান পরিস্থিতিতে কী ভাবে জোটবদ্ধ হয়ে লড়া যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে, তা ঠিক করা। বৈঠক শেষ করে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া বলেন, ‘নৈরাজ্যের রাজত্ব চলছে দেশে। প্রতিনিয়ত খাটো করা হচ্ছে সংবিধানকে। সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভেদের রাজনীতি করছে শাসক দল’।

এ দিন নাম করেই প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন সনিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের বিভ্রান্ত করছেন। তাঁদের নিজেদের কথায় কোনও সামঞ্জস্য নেই। বরং উস্কানিমূলক মন্তব্য বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দমন পীড়ণ।’’ উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে বারবার নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া নিয়েও মুখ খোলেন সনিয়া। তাঁর মতে, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া, ইলাহাবাদে, জেএনইউ-তে হামলা করিয়েছে বিজেপিই। ‘দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ বর্তমান সরকার’, বলছেন সনিয়া।

Advertisement

সমলোচনায় সরব হয়েছেন রাহুল গাঁধীও। চ্যালেঞ্জ ছোড়ার ভঙ্গিতে রাহুল বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বেকারত্ব নিয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যান’’। তাঁর দাবি, নরেন্দ্র মোদী সেই কাজ করতে সক্ষম হবেন না।

বৈঠক শেষে রাহুল গাঁধীর টুইট:

সনিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী বৈঠকে এ দিন অংশগ্রহণ করে মোট ২০টি দল। তবে তাতে বিরোধী ঐক্যের ফাটল লুকনো যায়নি। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজবাদী দলের নেত্রী মায়াবতী, আম আদমি পার্টি প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেন। বৈঠকে এলেন না শিবসেনা প্রতিনিধিও। দেখা গেল না অখিলেশের দল সমাজবাদী পার্টির কোনও প্রতিনিধিকেও।

এনআরসি-সিএএ এর মতো বিষয়গুলির বিরোধিতায় যাতে সুর না কাটে, সে জন্য সব বিরোধী দলের উপস্থিতি চেয়েছিল বৈঠকের আয়োজক দল কংগ্রেস। বিজেপির বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির শ্রমিক-ছাত্র-যুব সংগঠনের ডাকা সর্বভারতীয় ধর্মঘটের পরেই মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, বিরোধী-বৈঠকে তিনি যোগ দেবেন না। ক্রমে স্পষ্ট হয় এই দলে ভিড়তে চাইছেন না কেজরীবাল, মায়াবতীও। বৈঠকে গড়হাজির শিবসেনাও।

এ দিন বিএসপি নেত্রী টুইটারে লেখেন, ‘‘আমরা সিএএ এবং এনআরসির বিরোধী। আমরা কেন্দ্রকে বারবার অনুরোধ করব এই আইন প্রত্যাহার করতে। কিন্তু এই মিটিংয়ে যাচ্ছি না।’’ কারণ হিসেবে মায়াবতীর দাবি, বিএসপি-তে বারবার ভাঙন ধরাচ্ছে কংগ্রেস। রাজস্থানে বাইরে থেকে সমর্থন দিলেও বারবার বিএসপি কর্মীদের কংগ্রেসে টানা হচ্ছে। এই অবস্থায় এই বৈঠকে গেলে দলীয় কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

মায়াবতীর টুইট:

শিবসেনার দাবি, এই বৈঠকে তাদের ডাকাই হয়নি। শিবসেনার তরফে সাংসদ বিনায়ক নায়েক বলেন, ‘‘এই বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ পাইনি। পেলে দলীয় নেতৃত্বের বিবেচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’’ একই বক্তব্য আপ নেতা সঞ্জয় সিংহেরও। এই গরহাজিরার ফলে বৈঠকের গুরুত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে।

সনিয়া গাঁধীর উদ্যোগে সোমবারের বিরোধী শিবিরের বৈঠকের আগে শনিবার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয় দিল্লিতে এআইসিসি দফতরে। বৈঠক থেকে সংসদে পাশ হওয়া নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রত্যাহার ও জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি-র (এনপিআর) প্রক্রিয়া রদ করার দাবি তোলেন সনিয়া গাঁধী। এই দাবিতে সায় দেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও। একই সঙ্গে সনিয়া জানিয়ে দিলেন, এ বছরের এনপিআর-এর মোড়কেই যে আসলে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) লুকিয়ে আছে, সে বিষয়ে কোনও সংশয় থাকা উচিত নয়। কিন্তু এর সঙ্গে লড়াই কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে বিরোধী শিবিরে সবিস্তার আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করেই বৈঠক ডেকেছিলেন সনিয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement