—ফাইল চিত্র।
দিল্লি থেকে ব্যাঙ্কক। সেখানে এক দিন কাটিয়ে কম্বোডিয়া। সেখানে ১১ দিন। আবার ব্যাঙ্কক, এক দিনের জন্য। সেখান থেকে মায়ানমার। টানা ২১ দিন। ফের তাইল্যান্ডে ৯ দিন। ভিয়েতনামে ১২ দিন। অবশেষে দিল্লি ফেরার আগে ব্যাঙ্ককে আরও পাঁচ দিন।
টানা ৬০ দিন। নির্ভেজাল ছুটি।
নরেন্দ্র মোদী তখন প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। রাহুল গাঁধী রোজ মোদীকে দুষছেন ‘সুট-বুটের’ সরকার বলে। দলের সভাপতি তখনও নন, সহ-সভাপতি তো ছিলেন! হঠাৎ নিজেই উধাও!
আরও পড়ুন: বিল পুনর্বিবেচনার জন্য সিলেক্ট কমিটির দাবি
আর কেউ না রাখুন, প্রতি বার রাহুলের বিদেশ সফরের হিসেব রাখে বিজেপি। তাদের দাবি, গত পাঁচ বছরে এ ভাবে ন’বার কাউকে না জানিয়ে উধাও হয়েছেন রাহুল। কোথায় যান, তার তেমন খবর পাওয়া যায় না। কিন্তু ২০১৫ সালে ৬০ দিনের টানা ছুটির খবর ফাঁস হয়ে যায়। রাহুলের সঙ্গে কে ছিলেন, সে খবরও আসে। কংগ্রেস তখন বলেছিল, বৌদ্ধ সার্কিট ঘুরছেন রাহুল, ধ্যানে মগ্ন থাকছেন। ঠিক যে যুক্তি এখনও দিয়েছে কংগ্রেস। টানা ২৫ দিন রাহুলের দেখা নেই। মাঝে দীপাবলি গেল, ভাইফোঁটাও হল। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা ফোঁটা দিলেন টুইটেই। ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুদিন, গত কাল ছিল তাঁর জন্মদিন। জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন পালনও হল গত সপ্তাহে। দূষণের দিল্লিতে অসুস্থ সনিয়া গাঁধী থেকে অশীতিপর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সকাল থেকে সব অনুষ্ঠানে হাজির। আর রাহুল হাজির টুইটারে।
কোথায় যান রাহুল গাঁধী? দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা ৩০ অক্টোবর বলেছিলেন, ‘‘বিদেশে ধ্যান করছেন।’’ আর শিশু-দিবসে রাফাল রায় (যে রাফাল চুক্তি নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন রাহুলই) বেরোনোর পরে বললেন, ‘‘রাহুল গাঁধী ভারতেই আছেন।’’ কিন্তু কোথায়? উত্তর নেই। কবে ফিরবেন? তা-ও জানা নেই। প্রথম-প্রথম দেওয়া ধ্যানের তত্ত্ব যে আর খাটছে না, তা বুঝে কংগ্রেস এখন জবাব দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কারণ, রাহুল রোজই টুইট করছেন বা ফেসবুকে পোস্ট করছেন। ভোটমুখী ঝাড়খণ্ডে ১০ হাজার আদিবাসীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনার বিরোধিতা করে আজও টুইট করেছেন। অথচ সংসদের অধিবেশনে আসছেন না কেন?
কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা আজ সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘বড্ড ছেলেমানুষ রাহুল। এ ভাবে রেগে থাকলে চলে? এখন নাকি ম্যাডামের (সনিয়া) উপরেও রেগে আছেন।’’ কিসের এত রাগ?
নেতারা বলছেন, ‘‘রাহুল মনে করেন, ওঁর সঙ্গে কেউ নেই। ওঁর কথা কেউ বুঝছে না। সে কারণেই হার হয়েছে দলের। আর হেরেও কেউ কথা বুঝতে রাজি নন।’’
রাহুলের অনুগামী নেতারা অবশ্য তাঁর অনুপস্থিতি বুঝতে দিতে চাইছেন না। দলের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতা কে সি বেণুগোপালের পাশে দাঁড়িয়েই রণদীপ বলছেন, ‘‘সব কর্মসূচি সনিয়া গাঁধী-রাহুল গাঁধীর যৌথ নির্দেশেই হচ্ছে।’’ তাঁদের একটি অংশ বোঝানোর চেষ্টা করছেন, এ বারে ফিরেই ‘ঝড়’ তুলবেন রাহুল। একই দাবি তো গত বিদেশ সফরের সময়েও করেছিলেন। আর জবাব নেই। দলেরই আর একটি পক্ষের পাল্টা বক্রোক্তি, ‘‘দলের রাশ এখন সনিয়ার হাতে। রাহুলের তো দায়িত্বই নেই।’’ আর প্রবীণদের একটি অংশ রাহুলের কথা জিজ্ঞাসা করলেই একগাল হেসে বিদ্রুপ করছেন, ‘‘কার কথা বলছেন?’’ যদিও বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘প্রতিপক্ষে রাহুলের মতো নেতা থাকলে বিজেপির চিন্তা কী? ফলে রাহুলকে কংগ্রেসের প্রবীণেরা যতই সরানোর চেষ্টা করুন, বিজেপি তা হতে দেবে না।’’
আগামী সোমবার লোকসভার অধিবেশন শুরু হলে প্রথম প্রশ্ন থাকবে রাহুলেরই। কেরলে তফসিলি জাতি ও জনজাতি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হস্টেল নির্মাণ সংক্রান্ত। রাহুল তার আগে আসবেন কি? কংগ্রেসের এক সাংসদ বললেন, ‘‘আশা তো করা যাক!’’