PM Narendra Modi

দুর্নীতির অস্ত্রেই কি প্রত্যাঘাত মোদীর

রাহুলের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু মঙ্গলবার পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, “বেমক্কা অভিযোগ না তুলে তিনি আগে প্রমাণ দিন।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫২
Share:

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে তাঁর ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে লোকসভায় রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলে দেওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন কী ভাবে পাল্টা জবাব দেন, সেটাই দেখার।

Advertisement

আদানি-প্রশ্নে আজ দফায় দফায় উত্তাল হয়ে ওঠে লোকসভা। মোদী আজ লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন না। তবে বিজেপি সূত্রের দাবি, সংসদে নিজের কক্ষে বসে টিভিতে চোখ রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যে ভাবে রাহুল আজ তাঁকে নিশানা করে তাঁর চরিত্র ‘কালিমালিপ্ত’ করার কৌশল নেন, তা আদৌ মোদী ভাল ভাবে নেননি। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের বক্তব্য, নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখার প্রশ্নে বরাবরই অত্যন্ত সাবধানি মোদী। আজ যে ভাবে তাঁর দিকে ‘কাদা ছোড়া’ হয়েছে, তার পরে নিজের ভান্ডারের সমস্ত অস্ত্র নিয়েই প্রত্যাঘাতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। এই প্রত্যাঘাতের সম্ভাব্য কৌশল কী হতে পারে, তা নিয়েও সংসদের অলিন্দে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে অনেকেরই মতে, পাল্টা জবাবে রাহুল তথা গান্ধী পরিবারকে নিশানা করলেও নিজের সঙ্গে আদানির সম্পর্কের বিষয়টি হয়তো এড়িয়ে যাওয়ারই কৌশল নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

রাহুলের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু আজ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, বেমক্কা অভিযোগ না তুলে তিনি আগে প্রমাণ দিন। বিজেপি নেতারা ইতিমধ্যেই গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ওঠা দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন। বিশেষ করে উঠে এসেছে রাহুলের ভগ্নীপতি রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলি। বিজেপির লোকসভার সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ সন্ধ্যায় রাহুলের তোলা সমস্ত অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে বলেন, ‘‘দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন।’’ রাহুল, তাঁর মা সনিয়া ও ভগ্নীপতি রবার্ট যে আর্থিক অনিয়মের মামলায় জামিনে মুক্ত রয়েছেন, সেই কথাও উল্লেখ করে রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘গান্ধী পরিবারের অতীত ইতিহাস এক বার রাহুলকে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। কী করে ডিএলএফ থেকে রবার্ট ৬৫ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ এবং জমি পেয়েছিলেন? সস্তায় কেনা সেই জমি পরে বেশি দামে বিক্রি করে দিয়েছিলেন রবার্ট। রাহুল কি সেই দুর্নীতি ভুলে গিয়েছেন?’’ এখন দেখার, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রীও (প্রথাগত ভাবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীই জবাব দিয়ে থাকেন) ‘পারিবারিক দুর্নীতির’ অভিযোগ টেনে এনে রাহুলকে আক্রমণ করেন কি না।

Advertisement

কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার প্রশ্ন, ‘‘রাহুল তো আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিজেপি কেন এর জবাব দিতে যাচ্ছে?’’ এই প্রসঙ্গে রাজনীতির অনেকের মতে, আজ রাহুল যা করেছেন, তা কার্যত মোদীকে ব্যক্তি-আক্রমণ। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদজ্ঞাপক বিতর্কে নিজের বক্তৃতায় তিনি আজ প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্কটি ঠিক কী? কেন ওই সংস্থাকে ‘বাড়তি সুবিধা’ পাইয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী? কেন আদানিদের বরাত পাইয়ে দিতে নিয়ম পাল্টে ফেলে সরকার? ফলে জবাব দেওয়ার দায় পুরোটাই প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে এসে পড়েছে। তা ছাড়া, বিজেপি নেতৃত্বের মতে, কোনও হিসাব ফেলে রাখার অভ্যাস নেই মোদীর। তিনি জবাবি বক্তব্যেই রাহুলের ‘ঋণ’ মিটিয়ে দেবেন। যদিও লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘রাহুলের ক্ষেপণাস্ত্র হানার সামনে পড়ে শাসক শিবির কোনও উত্তর দিতে পারেনি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনমন্ত্রীকে মাঠে নামায় দল। কিন্তু তিনিও আক্রমণের মুখে থই পাননি।’’

সব মিলিয়ে বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে। বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, মোদীর সামনে আক্রমণের খোলা ময়দান পড়ে রয়েছে। তিনি কেবল গান্ধী পরিবারের বর্তমান সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রশ্নে সরব হবেন, না কি একেবারে জওহরলাল নেহরুর আমল থেকে আক্রমণ শানানো শুরু করবেন, জল্পনা চলছে তা নিয়েও। কংগ্রেস নেতারাও বলছেন, মোদী যে চাঁছাছোলা ভাষায় গান্ধীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ তুলবেন, তা তাঁরা ধরেই নিচ্ছেন। কিন্তু নিজের আদানি-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ খণ্ডনের পথে তিনি যান কি না, তা দেখতেও এখন উদ্‌গ্রীব গোটা সংসদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement