সীতারাম ইয়েচুরি —ফাইল ছবি।
কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি মার্ক্সবাদী ছিলেন। কিন্তু এটাও বুঝতেন দুনিয়া বদলে যাচ্ছে। তাই মার্ক্সবাদকে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। ১৯৯৬ সালে যখন যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসতে চলেছে, তখন আমাদের ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করতে হয়েছিল। তখন দিনের পর দিন সীতারামের সঙ্গে কথাবার্তা হত। সেই সময়ে আবিষ্কার করি, নিজের নীতিগত অবস্থানকে উনি দুর্দান্ত ভাবে আগলে চলেন। আবার অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার বিষয়েও যথেষ্ট নমনীয় হতে পারেন। যাতে বৃহত্তর লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়।
ইউপিএ সরকারের সময়ে বামেরা বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল। সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের দু’টো বিষয়ে দর কষাকষি করতে হত। এক, ভারত-আমেরিকা পরমাণু চুক্তি। দুই, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংস্কার। সে সময় প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা বলতে হত। ১৯৯৬-এ যখন যুক্তফ্রন্ট তৈরি হল সে সময় সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর সেরা রাজনৈতিক ফর্মে ছিলেন। আবার ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে যখন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ তৈরি হল, তখনও ইয়েচুরি তাঁর সেরা রাজনৈতিক ফর্মে।
‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ তো বটেই, যাঁরা গণতন্ত্র ও স্বাতন্ত্র্যকে ভালবাসেন, তাঁরা সীতারাম ইয়েচুরির অভাব বোধ করবেন। এমন সময়ে তাঁর মতো যোদ্ধার প্রয়োজন ছিল। কারণ, যারা গণতন্ত্র, স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চাইছে, তাদের হারিয়ে নির্ণায়ক জয় দরকার। সীতারাম স্বৈরাচারী শক্তি ও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকতেন। কখনও এই অবস্থান থেকে নড়েননি। গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি ওঁর এমন আবেগ ছিল, শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি এমন দায়বদ্ধতা ছিল যে কখনও নিজের মতাদর্শের ক্ষেত্রে আপস করেননি। দলের নেতৃত্ব সামগ্রিক ভাবে যে সিদ্ধান্ত নিত, আপস করেননি সে ক্ষেত্রেও।