সমস্যায় কংগ্রেস ফাইল চিত্র
ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বদলের দাবি নিয়ে সকাল থেকে বৈঠকে বসেছিলেন রাহুল গাঁধী। তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষ হতে না হতেই পঞ্জাবে কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বদলের দাবি উঠে গেল।
ছত্তীসগঢ়ে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেলকে সরিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টি এস সিংহদেও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবি তুলেছেন। সিংহদেওর দাবি, ২০১৮ সালে কংগ্রেস সরকার গঠনের সময়ই ঠিক হয়েছিল, প্রথম আড়াই বছর বঘেল, তার পরের আড়াই বছর তিনি মুখ্যমন্ত্রী হবেন। প্রতিশ্রুতিমাফিক মুখ্যমন্ত্রীর পদ না মিললে সিংহদেও শুধু সরকার নয়, কংগ্রেস ছাড়তে পারেন বলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানেও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সচিন পাইলটরা মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি তোলায় একই ভাবে সঙ্কট ঘনিয়েছিল। ছত্তীসগঢ়ের পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগে এ বার রাহুল নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন। আজ নিজের বাড়িতে বঘেল ও সিংহদেওর সঙ্গে আলাদা ভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকের পরে এআইসিসি-তে ছত্তীসগঢ়ের ভারপ্রাপ্ত নেতা পি এল পুনিয়া বলেন, ‘‘দুই নেতাই হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি হয়েছেন। বঘেল নিজেই বলেছেন, কংগ্রেস নেতৃত্ব যত দিন চাইবেন, তত দিনই তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন।’’ কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিষয়টির এখনও ফয়সালা হয়নি। আরও কয়েক দফা বৈঠক হবে।
এই বৈঠক শেষ হতে না হতেই পঞ্জাবের ৩১ জন কংগ্রেস বিধায়ক দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহকে সরাতে হবে। এঁদের মধ্যে পাঁচ জন মন্ত্রীও রয়েছেন। আজ চন্ডীগড়ে রাজ্যের মন্ত্রী তৃপত রাজেন্দ্র সিংহ বাজওয়ার বাড়িতে বৈঠকের পরে ওই বিধায়করা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর উপরে তাঁদের আর আস্থা নেই। কারণ, তিনি কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতিমতো কাজ করছেন না। তাঁরা দিল্লিতে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করবেন। সূত্রের খবর, এই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কয়েক জন নেতা এআইসিসি-তে পঞ্জাবের ভারপ্রাপ্ত নেতা হরিশ রাওয়তের সঙ্গে বৈঠক করতে দেহরাদূন রওনা হয়েছেন। ওই নেতারা প্রদেশ সভাপতি নভজ্যোত সিংহ সিধুর সঙ্গেও দেখা করেন। তিনি যে বিক্ষুব্ধদের পাশেই রয়েছেন, তা স্পষ্ট করে সিধু হাইকমান্ডকে জানাবেন বলে ঘোষণা করেছেন। রাতে আবার অমরেন্দ্র-শিবির থেকে দাবি করা হয়, ৩১ জন বিদ্রোহীর মধ্যে সাত জন পিছু হটেছেন।
ঘটনা হল, সিধুকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে বসিয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, অমরেন্দ্রর সঙ্গে সিধু ও বাকি নেতাদের সংঘাত মেটানো গিয়েছে। কিন্তু আগামী বছরের গোড়ায় পঞ্জাবের ভোটের আগে রাজ্য কংগ্রেসে বিক্ষোভ মাথাচাড়া দেওয়ায় গাঁধী পরিবারের চিন্তা বেড়েছে। সোমবারই সিধুর দুই উপদেষ্টা কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় অমরেন্দ্র শিবির তোপ দেগেছিল। এ বার সিধু বিদ্রোহী বিধায়কদের পাশে দাঁড়ানোয় কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, অমরেন্দ্র ওই উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে দিয়ে মামলা দায়ের করাতে পারেন। কারণ, অমরেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ছয় মন্ত্রী-বিধায়ক সিধুর উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন।
সব দেখেশুনে এক এআইসিসি-র নেতার হতাশ মন্তব্য, ‘‘মধ্যপ্রদেশে বিবাদ মেটাতে না পারায় সিন্ধিয়া বিজেপিতে গেলেন, সরকারেরও পতন হল। রাজস্থানে অশোক গহলৌত-সচিন পাইলট বিবাদের এখনও ফয়সালা হয়নি। ছত্তীসগঢ়ের জট ছাড়াতে না ছাড়াতেই ফের পঞ্জাব হাজির। সনিয়া-রাহুল গাঁধী বিজেপির মোকাবিলা করবেন, না কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাবেন?’’