Congress

Political instability: মমতা, কেসিআরকে নিয়ে অবিশ্বাস কংগ্রেসে

উল্টো দিকে কংগ্রেসও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৪১
Share:

ফাইল চিত্র।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে অ-বিজেপি দলগুলির মধ্যে সক্রিয়তা শুরু হতেই বিরোধী শিবিরে অবিশ্বাসের আবহ স্পষ্ট হয়ে উঠল।

Advertisement

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের কৌশল ও রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় জন্য গত কাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন ও টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মমতা স্পষ্ট করলেন, তিনি বিরোধী জোটে কংগ্রেসের বদলে আঞ্চলিক দলগুলিরই আধিপত্য চাইছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল নিজের মতো চলবে। কংগ্রেস তার নিজের মতো চলবে।’’ দু’একটি আঞ্চলিক দল সরকার গড়তে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে বাধ্য হলেও, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও আঞ্চলিক দলেরই সম্পর্ক ভাল নয় বলেও আজ দাবি করেছেন মমতা।

উল্টো দিকে কংগ্রেসও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখছে। গোয়ায় তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে কংগ্রেস অনেকদিন ধরেই সরব। কংগ্রেস মনে করে, তৃণমূল আসলে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই গোয়ায় নেমেছে। কংগ্রেস আজ চন্দ্রশেখর রাওকে ‘গিরগিটি’ তকমা দিয়েছে। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রাও সার্জিকাল স্ট্রাইকের প্রমাণ চাওয়ার মতো একাধিক বিষয় নিয়ে গত কাল রাহুল গান্ধীকে আগ বাড়িয়ে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু এআইসিসি-তে তেলঙ্গানার ভারপ্রাপ্ত নেতা, রাহুল-ঘনিষ্ঠ মাণিকম টেগোর আজ মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত সাত বছরে রাওয়ের দল সংসদে বিজেপিকে সাহায্য করে এসেছে। এখন বিজেপি তাঁর রাজ্যে শক্তিশালী হয়ে উঠছে দেখে তিনি ভোল পাল্টেছেন। রাও আগামিকাল ফের ভোল পাল্টে ফেলবেন না, তার গ্যারান্টি নেই।

Advertisement

জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। বিজেপি-বিরোধী ও অবিজেপি, অকংগ্রেসি এক মেরুতে চলে এলে নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে। মমতা সক্রিয় হয়ে স্ট্যালিন, রাওকে ফোন করার পরে চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে দেখা করবেন। কংগ্রেস শিবির মনে করছে, মমতা আসলে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলে নিজেদের পছন্দ মতো প্রার্থী ঠিক করে কংগ্রেসের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন। বার্তা দেবেন, বিরোধী জোটের নেতৃত্ব কংগ্রেস দেবে না। আঞ্চলিক দলগুলির হাতে রাশ থাকবে। উল্টোদিকে কংগ্রেস শিবির চাইবে নিজেদের প্রার্থী দিতে। যাঁকে আঞ্চলিক দলগুলি সমর্থন করবে। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, বিজেপিও বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরাতে এমন কাউকে প্রার্থী করার কথা ভাবতে পারে যাঁকে তৃণমূল বা ডিএমকে সমর্থন করবে।

এই টানাপড়েনের মধ্যে তৃণমূল, রাওয়ের ভূমিকা নিয়ে কংগ্রেসে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হল, মমতা, রাও আসলে বিজেপিরই সুবিধা করে দিতে চাইছেন না তো? তামিলনাড়ুকে ডিএমকে, কংগ্রেসের জোট সরকার চলছে। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে এনসিপি, কংগ্রেসের। তা সত্বেও মমতা যে ভাবে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে স্ট্যালিনকে ফোন করেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আঞ্চলিক দলের সম্পর্ক ভাল নয় বলেছেন, রাও আবার উদ্ধবের
সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন, তাতে সংশয় বাড়ছে।

তৃণমূল গোয়ায় গিয়ে কংগ্রেস দলেই ভাঙন ধরিয়েছিল। পরে আবার তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বই কংগ্রেস হাই কমান্ডকে বিরোধী জোটের স্বার্থে এককাট্টা হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কংগ্রেসকে নিশানা করে তৃণমূল আদতে বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা থেকেও মমতা বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেস সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। তৃণমূল সূত্রের ইঙ্গিত, সনিয়ার সঙ্গে পুরনো সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে মমতা ভবিষ্যতে আবার উদ্যোগী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে গোয়ায় তৃণমূলের কার্যকলাপের দায় তিনি প্রশান্ত কিশোর-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে চাপিয়ে দিতে পারেন।

একই ভাবে রাওয়ের ভূমিকা নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ইউপিএ সরকার তেলঙ্গানা গঠনের পরে রাও সনিয়া গান্ধীকে ‘তেলঙ্গানার আম্মা’ বলেছিলেন। পরে তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চলে যান। গত লোকসভা ভোটের আগেও তিনি বিজেপি-বিরোধী জোটে ভাঙন ধরাতে ‘ফেডেরাল ফ্রন্ট’ নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। রাহুলকে সমর্থন করে গত কাল রাও বলেছিলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী সার্জিকাল স্ট্রাইকের প্রমাণ চেয়ে কী ভুল করেছেন? আমিও প্রমাণ দাবি করছি।’’ অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেছিলেন, রাহুল রাজীবের পুত্র কি না, তার প্রমাণ কি চাওয়া হয়েছে? এ বিষয়েও রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে হিমন্তকে নিশানা করেছেন রাও। তাঁর কন্যা কে কবিতার মন্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদী তেলঙ্গানা গঠন নিয়ে সংসদে মনমোহন-সনিয়াকে নিশানা করেছিলেন বলে রাও রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তাঁদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।’’ তা সত্ত্বেও তেলঙ্গানার প্রদেশ
কংগ্রেস সভাপতি রেবন্ত রেড্ডি জানিয়েছেন, টিআরএসের সঙ্গে হাত মেলানোর কোনও প্রস্তাব নেই। থাকলেও টিআরএসের এই ফাঁদে পা দেবে না কংগ্রেস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement