প্রিয়ঙ্কা গাঁধী।
উত্তরপ্রদেশে ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেস নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হোন রাহুল গাঁধী বা প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার মধ্যে কোনও এক জন। না-হলে কোনও ব্রাহ্মণকে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী মুখ করা হোক। তাঁর যুক্তি ছিল, ব্রাহ্মণরাই উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের পুরনো ভোটব্যাঙ্ক।
সেই বছর দলের তরফে প্রথমে মুখ করা হয় দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রয়াত শীলা দীক্ষিতকে। কিন্তু সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেস জোট গড়ায় সরে দাঁড়ান কংগ্রেসের এই ব্রাহ্মণ মুখ। ভোটে বড় ধাক্কা খায় কংগ্রেস-এসপি জোট। ২০১৭-র হারের পরে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও বড় ধাক্কা খায় কংগ্রেস। তার পর থেকে উত্তরপ্রদেশে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। এ বার ২০২২-এর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছেন প্রিয়ঙ্কা। এখন থেকেই কংগ্রেস নিজের পুরনো ভোটব্যাঙ্ককে ফিরে পেতে ব্রাহ্মণ-তাস খেলা শুরু করল। বিজেপি ঠাকুর সম্প্রদায়ের যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করার পর থেকে উত্তরপ্রদেশে ব্রাহ্মণদের কদর কমেছে বলে অভিযোগ তুলে প্রচারে নামছে কংগ্রেস। এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের তরুণ নেতা জিতিন প্রসাদকে। যিনি নিজেও ব্রাহ্মণ।
জিতিন ২০১৯-এর শেষে এক বার ‘ব্রাহ্মণ চেতনা যাত্রা’ করে একই চেষ্টা করেছিলেন। এ বার প্রিয়ঙ্কা পাকাপাকি ভাবে লখনউয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসার আগে জিতিন ফের ‘ব্রাহ্মণ চেতনা পরিষদ’ তৈরি করে মাঠে নেমেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘উত্তরপ্রদেশে এখন ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধেই সবথেকে বেশি হামলা হচ্ছে। ২০১৯ ও ২০২০-র এখনও পর্যন্ত, দেড় বছরে ২৮ জন ব্রাহ্মণ খুন হয়েছেন।’’ কংগ্রেসের প্রচারে এ নিয়ে যোগী সরকারকে নিশানা করা হবে। চেতনা পরিষদের মাধ্যমে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের সঙ্গে কংগ্রেস যোগাযোগ তৈরি করবে। ব্রাহ্মণদের উন্নতির জন্য কংগ্রেসের কী করা উচিত, তা নিয়ে মতামত চাওয়া হবে। ব্রাহ্মণদের জাত্যাভিমান উস্কে দিতে কংগ্রেস মনে করিয়ে দিচ্ছে, নারায়ণদত্ত তিওয়ারির পরে ১৯৮৯ থেকে রাজ্যে আর কোনও ব্রাহ্মণ মুখ্যমন্ত্রী হননি। জিতিনের যুক্তি, ‘‘ব্রাহ্মণ সমাজের নেতারাই নিজেদের মূল্যহীন মনে করছেন। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে, আমলাতন্ত্রে বরাবরই ব্রাহ্মণদের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্তু এখন তা নামমাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ উদাহরণ হিসেবে কংগ্রেস বলছে, যোগীর ৫৮ জনের মন্ত্রিসভায় মাত্র ৮ জন ব্রাহ্মণ রয়েছেন।
আরও পড়ুন: সেনা পিছোনোর সিদ্ধান্তে লাভ কী, প্রশ্ন তুললেন বিশেষজ্ঞেরা
উত্তরপ্রদেশে জনসংখ্যায় ব্রাহ্মণ প্রায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ। পূর্বাঞ্চলে ব্রাহ্মণদের সংখ্যা বেশি। এক সময় ব্রাহ্মণ, দলিত, মুসলিম— এটাই ছিল কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্ক। কিন্তু পরে ব্রাহ্মণরা বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়েন। পরে মায়াবতী ‘সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়’-র নামে সতীশ মিশ্রর মতো ব্রাহ্মণ নেতাকে দলের উপরের সারিতে তুলে আনায় ব্রাহ্মণরা তখন বিএসপি-র দিকে ঝুঁকেছিলেন। ব্রাহ্মণদের কাছে টানার পাশাপাশি মায়াবতীকে বিজেপির বি-টিমের নেত্রী তকমা দিয়ে দলিত ভোটেও ভাগ বসাতে চাইছেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁর অভিযোগ, গোটা দেশে দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের তিন ভাগের এক ভাগ উত্তরপ্রদেশে হয়।
কিন্তু এই জাতপাতের রাজনীতি কেন? জিতিনের জবাব, ‘‘আমরা যদি নিজেদের লোকের সঙ্গে কথা বলি, তা হলে কার কী সমস্যা?’’