ফাইল ছবি
এক সপ্তাহের মধ্যে ভোল বদল!
গত রবিবার উদয়পুরের চিন্তন শিবিরের শেষে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলি লড়াই করতে পারবে না। কংগ্রেসই বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেবে বুঝিয়ে রাহুলের যুক্তি ছিল, আঞ্চলিক দলগুলির কোনও মতাদর্শ নেই। তাই তারা বিজেপিকে হারাতে পারবে না।
শুক্রবার লন্ডনে গিয়ে কার্যত একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে রাহুল বলেছেন, কংগ্রেস মোটেই বিরোধী শিবিরে দাদাগিরি করতে চায় না। লন্ডনে ‘আইডিয়াজ় ফর ইন্ডিয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আলাপচারিতায় রাহুল উল্টে বিরোধী জোটের পক্ষে এবং বিজেপি বিরোধী ভোটকে এক বাক্সে এনে ফেলার পক্ষে সওয়াল করেছেন।
নিজের উদয়পুরের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে রাহুলের বক্তব্য, কংগ্রেস অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ, তিনি এমন কিছু বলতে চাননি। তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। সব দলই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে। কিন্তু মতাদর্শগত ভাবে যে লড়াইটা হচ্ছে, সেটা আরএসএসের জাতীয় মতাদর্শের সঙ্গে কংগ্রেসের জাতীয় মতাদর্শের। যেমন ডিএমকে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দল। কিন্তু কংগ্রেসে মতাদর্শ জাতীয় রাজনীতির।
আঞ্চলিক দলের কোনও মতাদর্শ নেই, তারা বিজেপিকে হারাতে পারবে না, তাই বিজেপি তাদের নিশানাও করে না— রাহুলের এই সব মন্তব্যের পরেই আঞ্চলিক দলের নেতারা তাঁকে নিশানা করেছিলেন। তৃণমূল তো বটেই, আরজেডি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মতো কংগ্রেসের শরিক দলও তাঁর কথার বিরোধিতা করেছিল। সেই আক্রমণের পরে রাহুল এ বার লন্ডনে গিয়ে বিরোধী দলের জোটের প্রয়োজনের কথাই বলেছেন।
রাহুলের বক্তব্য, একটা রাজনৈতিক সংগঠন দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান দখল করে ফেলেছে। তার সঙ্গে লড়তে হলে একমাত্র পথ দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া। শুধু কংগ্রেস নয়, সব বিরোধী দলকেই তা করতে হবে। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বড় মাপের গণআন্দোলনে যেতে হবে। বিজেপি সেখানে বিরোধী শিবিরে বন্ধু দলের সঙ্গেও সমন্বয় করতে হবে। এই সব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও মেরুকরণের ফলে বিজেপি জিতে চলেছে। ফলে যে ৬০ শতাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দেয় না, তাদের কাছে যেতে হবে। বিরোধীদের এক সঙ্গে তা করতে হবে। রাহুলের যুক্তি, “আমি মোটেই কংগ্রেসকে বিগ ড্যাডি হিসেবে দেখি না। ভারতকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে চেষ্টা করতে হবে।”
বিরোধী জোট ও গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজনের কথা বলে রাহুল লন্ডনে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপি গোটা দেশে কেরোসিন ছড়াচ্ছে। একটা আগুনের ফুলকি লাগলেই বিরাট সমস্যা তৈরি হয়ে যাবে। ভারত ভাল জায়গায় নেই। কংগ্রেসকে তাই দায়িত্বশীল হয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়, ধর্মের মানুষকে এককাট্টা করতে হবে। উত্তপ্ত পরিবেশকে ঠান্ডা করতে হবে। বেসরকারি সংস্থার একচেটিয়া কারবারের সমালোচনা করে রাহুল বলেছেন, একটাই সংস্থা সমস্ত বিমানবন্দর, বন্দর, পরিকাঠামো নিয়ন্ত্রণ করবে, এটা খুবই বিপজ্জনক। সরকার সংবাদমাধ্যমকেও একই ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।
বিদেশের মাটিতে ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে মুখর হওয়ায় আজ মোদী সরকারের মন্ত্রী থেকে বিজেপি নেতৃত্ব রাহুলের কড়া সমালোচনা করেছেন। রাহুল বলেছিলেন, ভারতের কূটনীতিকরা এখন অহঙ্কারী হয়ে গিয়েছেন। তাঁকে ইউরোপের আমলারা বলেছেন, ভারতের কূটনীতিকরা কোনও কথা শুনতে চান না। বিদেশমন্ত্রী, অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক এস জয়শঙ্কর বলেছেন, “হ্যাঁ, ভারতের কূটনীতিকরা বদলে গিয়েছেন। তাঁরা সরকারের নির্দেশ মানেন। অন্যের যুক্তির পাল্টা যুক্তি দেন। এটা অহঙ্কার নয়, আত্মবিশ্বাস। দেশের স্বার্থ রক্ষা।”
আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর কটাক্ষ, “কংগ্রেসের আমলে কূটনীতিকরা পণ্ডিত নেহরুর নাতির জন্য কলেজ খুঁজতে ব্যস্ত থাকতেন।” বিজেপি মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়ার অভিযোগ, ‘হতাশ ও ব্যর্থ কংগ্রেস নেতা বিদেশের মাটিতে দেশের নিন্দা করছেন। মোদী সরকারকে ঘৃণা করতে করতে গান্ধী পরিবার এখন ভারতকেও ঘৃণা করছে। ভারতে পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলতেও তিনি পিছপা হচ্ছেন না।’