কাশ্মীর প্রশ্নে বাবা-ছেলেকে আজ এক যোগে আক্রমণ শানাল কংগ্রেস। কাশ্মীরে সন্ত্রাস থামাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং সন্ত্রাসের এই আবহে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আক্রমণের মুখে পড়েছেন তাঁর ছেলে তথা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের সচিব জয় শাহ। কংগ্রেসের বক্তব্য, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণে পিতা আর ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে ছেলে। পিতা-পুত্র নিজেরাই বৈঠক করে ঠিক করে নিক, তাঁরা এ ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন।
বিরোধী শিবিরে থাকার সময়ে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দলের নেতারা অতীতে সন্ত্রাসের ছায়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেট খেলা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আপত্তি জানিয়ে এসেছেন। গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানের মদত পাওয়া জঙ্গিরা কাশ্মীরে নিরীহ মানুষজনকে হত্যা করায় বিজেপির ধাঁচেই পাকিস্তানের সঙ্গে আসন্ন ২৪ অক্টোবরের টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ বাতিলের দাবিতে সরব হয়েছে বিরোধীরা। এতে রীতিমতো অস্বস্তিতে শাসক শিবির।
সম্প্রতি উপত্যকায় সংখ্যালঘু শিখ ও হিন্দু নাগরিকদের হত্যার নতুন কৌশল নিয়েছে জঙ্গিরা। লক্ষ্য, কাশ্মীরে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করা। সে কাজে অনেকাংশে সফলও হয়েছে জঙ্গিরা। গত দুসপ্তাহে ৩২ জন নিরীহ নাগরিকের হত্যার কারণে পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই উপত্যকা ছাড়তে শুরু করেছেন।
দেশের নিরাপত্তা ও ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব শাহ পরিবারের হাতে থাকায় পিতা-পুত্রের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের নেতা গৌরব বল্লভের অভিযোগ, জম্মু-কাশ্মীর পিতার নিয়ন্ত্রণে, আর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ছেলের নিয়ন্ত্রণে। প্রথমে পিতা-পুত্র নিজেরাই আলোচনা করে ঠিক করে নিয়ে দেশকে জানাক তাঁরা এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জঙ্গিদের মদত দেওয়া পাকিস্তানের সঙ্গে কেন ক্রিকেট খেলা হবে, এ নিয়ে বিরোধীদের ধাঁচেই প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অভ্যন্তরেও। কোনও ভাবেই ম্যাচ বাতিল হবে না বলে বিসিসিআই জানিয়ে দিলেও, গোটা ঘটনায় অমিত ও জয় শাহের নাম জড়িয়ে পড়ায় ব্যাকফুটে বিজেপি। বিজেপির দাবি ছিল, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করায় উপত্যকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে শান্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক একাধিক জঙ্গি হামলার ঘটনায় শাসক শিবিরের দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বিশেষ করে নিরীহ জনগণকে জঙ্গিরা নিশানা বানানোয় তা রোখার প্রশ্নে কার্যত দিশেহারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও।
এই আবহে সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে আজ জম্মু-কাশ্মীরকে অবিলম্বে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সরব হন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্র গৌরব বল্লভ বলেন, “সরকারের কাশ্মীর নীতি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর এত দিন সরাসরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তা সত্ত্বেও সেখানে পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। জঙ্গি হামলায় নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছেন। তাই কেন্দ্রের উচিত সংবিধান মেনে গণতান্ত্রিক ভাবে সেখানে ভোট করিয়ে অবিলম্বে জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া।”
গত দু’সপ্তাহে কাশ্মীরে মারা যান ৩২ জন নাগরিক। জঙ্গিদের হামলায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জন সেনার। উপত্যকায় নিরীহ সংখ্যালঘু জনগণকে পরিকল্পনামাফিক নিশানা বানানো হচ্ছে বলে মনে করেছে কংগ্রেস। গৌরব বল্লভর দাবি, রীতিমতো পরিকল্পনা করে বেছে বেছে হত্যালীলা চালানো হয়েছে। কেন্দ্রের কাছে এ বিষয়ে গোড়াতে কোনও তথ্যই ছিল না। হত্যামিছিল নিয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেন নীরব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। গৌরব বল্লভের কটাক্ষ, “সম্ভবত লখিমপুর কাণ্ডে ফেঁসে যাওয়া নিজের প্রতিমন্ত্রী (অজয় মিশ্র)-কে বাঁচাতেই তিনি ব্যস্ত ছিলেন। তাই কাশ্মীরে মন দিতে পারেননি।”