—প্রতীকী চিত্র।
গোষ্ঠীহিংসা দীর্ণ মণিপুরে এ বার উন্মত্ত জনতা রাস্তার উপর মহিলার পোশাক ছিঁড়ে নগ্ন করল বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, আক্রান্ত দুই মহিলাকে ধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ। সামাজিক মাধ্যমে ওই ঘটনার ‘প্রমাণ’ বলে দাবি করে বুধবার কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও আনন্দবাজার অনলাইন সেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি।
নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবি ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে দেশ জুড়ে। মণিপুর সফররত তৃণমূল প্রতিনিধি দল থেকে শুরু করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মণিপুরের ওই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে মণিপুর সফররত তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মহিলাদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ আমাদের নজরে এসেছে। সংসদের অধিবেশনে আমরা বিষয়টি তুলব।’’
তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, ‘‘মণিপুরের রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া সেই দৃশ্য। যেখানে দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁদের উপর এক দল পুরুষ যৌন নির্যাতন করছে।’’ এর পরেই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার অভিযোগ দেখতে আসা বিজেপির ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’ এবং ‘মহিলা প্রতিনিধি দল’ পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। ওই টুইটে লেখা হয়েছে, ‘‘মণিপুরে তথ্যানুসন্ধানী দল এবং কমিশন পাঠাকে কেন্দ্রকে কে বাধা দিচ্ছে? নারী এবং শিশুকল্যাণ মন্ত্রী এখনও চুপ কেন?’’
মণিপুর সফররত তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের নেতা, রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে আমরা বলব, ‘মন কি বাত’ অনেক হয়েছে, এ বার ‘মণিপুর কি বাত’ বলুন।’’ অন্য দিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বুধবার বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় ভাবধারা আক্রান্ত।’’ এই পরিস্থিতিতে ২৬ দলের নবগঠিত বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ চুপ করে থাকবে না বলে জানান তিনি।
বুধবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি গত ৪ মে তোলা বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। থৌবল জেলায় নংপোক সেকমাই থানার অদূরের ওই দুই মহিলার উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। যদিও একটি সংগঠনের দাবি, ঘটনাটি কঙ্গকপি জেলার। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ এই ঘটনায় পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি টুইটারে লিখেছেন, “দুই মহিলার উপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের সাথে কথা হয়েছে। তদন্ত চলছে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ঘটনার ন্যায়বিচার হবে।” মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণ, বিবস্ত্র করে হাঁটানো, গণধর্ষণ এবং হত্যার মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই বিজেপি শাসিত রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই কুকি, জ়ো-সহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই হিংসার সূচনা হয় সেখানে।
এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’শো মানুষের মৃত্যু এবং ৫০ হাজারের বেশি গৃহহীন হয়েছেন মণিপুরে। এই পরিস্থিতিতে রাহুল বুধবার বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তা মণিপুরকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গিয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে মণিপুরে হিংসায় ঘরছাড়াদের ত্রাণশিবিরগুলি পরিদর্শন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিলেন রাহুল। অন্য দিকে, মহিলাদের উপর হামলার নিন্দা করে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা বঢরা বুধবার টুইটারে লেখেন, ‘‘মণিপুরে শান্তির প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের সকলকে এক কণ্ঠে সহিংসতার নিন্দা জানাতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আরও এক রাজ্য অসমে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার সময় লক্ষ্মী ওরাং নামে এক আদিবাসী মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানোর অভিযোগ উঠেছিল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সেই স্মৃতি উস্কে দিল মণিপুর।