কর্নাটকের গ্রামের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে অন্তর্বাস ভিক্ষা করছেন সঙ্ঘকর্মীরা। ছবি পিটিআই।
এঁরা এক প্রস্ত ‘চাড্ডি’ পুড়িয়েছেন। ওঁরা বলছেন, ‘যত ইচ্ছে পোড়ান’। তার জন্য বাক্স বাক্স ‘চাড্ডি’ পাঠাচ্ছেনও প্রতিপক্ষকে। উন্নয়ন নয়, কল্যাণমূলক প্রকল্প নয়, সামাজিক ন্যায় নয়, কর্নাটকের রাজ্য-রাজনীতির সম্বল আপাতত অন্তর্বাসটুকু।
নেতারা অবশ্য ‘চাড্ডি’ শব্দটাই বার বার ব্যবহার করছেন। বিষয়টা শুরু হয়েছিল রাজ্যে স্কুলপাঠ্য বইয়ের গৈরিকীকরণের অভিযোগ ঘিরে। স্বাধীনতা সংগ্রামী, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারকদের সম্পর্কে লেখা পাঠ্যাংশ বাদ দিয়ে আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলরাম হেডগেওয়ারের বক্তৃতা স্কুলের বইয়ে ঢোকানো নিয়ে কংগ্রেস ছাড়াও একাধিক শিক্ষাবিদ আপত্তি জানিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআইয়ের সদস্যেরা কর্নাটকের শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেশের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে সঙ্ঘের উর্দির প্রতীক হিসেবে একটি খাকি হাফপ্যান্ট পুড়িয়ে আসেন। কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা সিদ্দারামাইয়া বলেন, ‘‘চাড্ডি পুড়িয়েছে তো হয়েছেটা কী? আরএসএসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আমরা সর্বত্র চাড্ডি পোড়াব।’’
এই ঘটনা রবিবারের। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী তখনই বলেছিলেন, ‘‘সিদ্দারামাইয়া আর কংগ্রেসের চাড্ডি তো এমনিতেই ঢিলে হয়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ওঁদের চাড্ডি হারিয়ে গিয়েছে। চামুণ্ডেশ্বরীতে (ভোটে হেরে) সিদ্দারামাইয়া চাড্ডি আর লুঙ্গি, দু’টোই খুইয়েছেন। তাই এখন সঙ্ঘের চাড্ডি পোড়াতে নেমেছেন।’’ আর এক বিজেপি নেতা চালওয়াড়ি নারায়ণস্বামী বলেন, ‘‘সিদ্দারামাইয়া চাড্ডি পোড়াতে চাইলে নিজের বাড়িতে পোড়ান। আমি আমাদের সব জেলা সভাপতিকে বলে দেব, নিজেদের চাড্ডি ওঁকে পাঠাতে। তবে এত অন্তর্বাস পোড়ালে দূষণ হবে তো। সিদ্দারামাইয়াকে তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের একটা অনুমতি নিতে হবে।’’
এখন কী করবেন সিদ্দা? হুবলিতে প্রশ্নটা শুনেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সপাট উত্তর, ‘‘আরএসএস যে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন নয়, সেটা তো গোড়া থেকেই বলে আসছি। কখনও কোনও দলিত, ওবিসি, বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকে সরসঙ্ঘচালক হতে দেখেছেন? চাড্ডিরা এ ছাড়া কী করবে? চাড্ডি তো চাড্ডিরই কাজ করবে!’’
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সস্তা রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই বলেছেন, ‘‘সিদ্দারামাইয়ার আর কোনও বিষয় নেই। তিনি রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলুন।’’ কিন্তু বোম্মাইয়ের দলের কর্মীরা চাড্ডি-যুদ্ধে এখনই ইতি টানতে নারাজ। শোনা যাচ্ছে, কর্নাটকের গ্রামের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে অন্তর্বাস ভিক্ষা করছেন সঙ্ঘকর্মীরা। তার পর সে সব বেঁধেছেঁদে পাঠাচ্ছেন বেঙ্গালুরুর কংগ্রেস অফিসে। আর একান্তে বলছেন, ‘‘এত চাড্ডি পাঠাব, সিদ্দা পুড়িয়ে শেষ করতে পারবেন না!’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।