ফাইল ছবি
পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই ও ইডির লাগাতার হানার মধ্যেই বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে রেশন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সুর চড়াল তৃণমূল কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি। তৃণমূলের অভিযোগ, সিবিআই ও ইডির মতো সংস্থাগুলি বিরোধীদের শাসনে থাকা রাজ্যগুলিতে অতি-সক্রিয় হলেও বিজেপি-শাসিত রাজ্যে দুর্নীতির খবর শুনে ঘুমিয়ে পড়েছে। এই প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করেছেন তাঁরা। এরই পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের সামনে এখন নতুন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর দলেরই আর এক নেতা— জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। রেশন কেলেঙ্কারির সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ থেকে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের খবরও সামনে আসতে শুরু করেছে।
শিবরাজের হাতে থাকা মধ্যপ্রদেশের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের বিরুদ্ধে রেশন সরবরাহে কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ সামনে আসার পরে মোদী সরকারকে নিশানা করে তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ বলেছেন, ‘‘সিবিআই, ইডি ও মো-শা-র (মোদী-শাহ) অন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিশেষ জিপিএস (জিয়োগ্রাফিক্যাল পলিটিক্যাল সিলেক্টিভ সিস্টেম) রয়েছে। যা এই সব তদন্তকারী সংস্থাকে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে ঢুকতে দেয় না।’’
শুধু তৃণমূলই নয় কংগ্রেসও মধ্যপ্রদেশে রেশন কেলেঙ্কারি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ আজ বলেছেন, ‘‘এর আগে ব্যপম কেলেঙ্কারির মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি-শাসিত সরকার যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। আর এবার গরিব শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্রতি অন্যায় করেছে তারা।’’ শিবরাজ ও সিন্ধিয়াকে কটাক্ষ করে জয়রামের মন্তব্য, ‘‘মামা আর মহারাজা কি এই ধরনের কেলেঙ্কারি করতেই রয়েছেন?’’
মধ্যপ্রদেশের নারী ও শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান দেওয়া নিয়ে কার্যত পুকুর চুরির কথা উঠে এসেছে রাজ্যের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের গোপন রিপোর্টে। একটি চ্যানেলের দাবি, ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘টেক হোম রেশন’ প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা বাড়ানো থেকে শুরু করে মোটরবাইকের নম্বরকে পরিবহণকারী ট্রাকের নম্বর বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছে।
তৃণমূলের তরফে টুইট করে আজ বলা হয়েছে, ‘‘মধ্যপ্রদেশের বিজেপি-শাসিত সরকার একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার। বিজেপির নেতারা শিশুদেরও ছেড়ে কথা বলছেন না। অথচ এই সব খবর শুনে ইডি ও সিবিআই ঘুমিয়ে পড়বে। বিজেপির দু’মুখো নীতি এতে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’ কংগ্রেস নেতা ও মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহ বলেছেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার রোজই দুর্নীতির রেকর্ড গড়ছে। মামা এখন এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে তিনি ভাবছেন, সবাইকেই বিক্রি করে দেওয়া সম্ভব।’’ আইনজীবী ও সমাজকর্মী প্রশান্ত ভূষণ বলেছেন, ‘‘মামা কা আনাজ ঘোটালা! ট্রাক খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে মোটরসাইকেল!’’
বিরোধীদের সম্মিলিত আক্রমণের মধ্যেই শিবরাজের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সিন্ধিয়া। তাঁর দুই অনুগামী তথা রাজ্যের মন্ত্রী মহেন্দ্র সিসৌদিয়া এবং ব্রিজেন্দ্র সিংহ যাদব এখন শিবরাজের প্রশাসনের কাজ ও শীর্ষ আমলাদের নিশানা করতে শুরু করেছেন। তাঁদের পাশেদাঁড়িয়েছেন সিন্ধিয়া শিবিরের আরও দুই বিধায়ক সীতাশরণ শর্মা ও নারায়ণ ত্রিপাঠী। রাজ্যের মন্ত্রীরা মুখ্যসচিব আইএস বৈসকে নিশানা করায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পরিস্থিতি অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। ।