নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
নেতাজির একশো পঁচিশতম জন্মদিবস নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক যুদ্ধ আজ ফের সামনে চলে এল। ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতায় গিয়ে নেতাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা। আজ প্রধানমন্ত্রীর ওই দিন কলকাতায় নেতাজি-সংক্রান্ত কর্মসূচির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রহ্লাদ সিংহ পটেল। সেই সঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সরকার তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি মেনে ২৩ জানুয়ারিকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে না। কেন্দ্র যা স্থির করছে, সেই ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবেই এই দিনটিকে গণ্য করা হবে। পাশাপাশি হাওড়া-কালকা মেলের নাম ‘নেতাজি এক্সপ্রেস’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ছদ্মবেশে পরাধীন ভারত ছাড়ার সময়ে ওই ট্রেনেই সফর করেছিলেন নেতাজি। তখন ট্রেনটির নাম ছিল ‘ফ্রন্টিয়ার মেল’।
মমতার দীর্ঘদিনের দাবি, ২৩ জানুয়ারিকে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করার। সেই প্রসঙ্গেও ইতিবাচক কোনও জবাব দিতে শোনা যায়নি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। তিনি শুধু জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি হয়েছে, তারাই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। এখনই নেতাজি জয়ন্তীতে জাতীয় ছুটি ঘোষণার কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রের নেই।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলার মনীষীদের নিয়ে উচ্চকিত হতে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। নেতাজির জন্মদিবসে মোদীর বাংলায় গিয়ে উদযাপন করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণে্াদিত, এই দাবি রাজ্যের বিরোধীদের। প্রধানমন্ত্রীর ২৩ জানুয়ারি রাজ্যে আসার সম্ভাবনা নিয়ে পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথমে তো ওঁদের নেতাজির নামই জানা ছিল না। বলেছিলেন সব ফাইল দেবেন। তার পরে অর্ধেক দিয়েছেন, অর্ধেক দেননি। ভোট এলে বাংলার কথা খুব মনে পড়ে, ভোট চলে গেলে বাংলাকে ভুলে যান। ‘বাংলা’ও বলতে পারেন না। বলেন, ‘বাঙ্গাল’। ভোটের বছর, তাঁরা আসতেই পারেন। সেটা তাঁদের ব্যাপার, কোনও সমস্যা নেই। বাংলায় সবাইকেই স্বাগত, গুন্ডা অথবা সাম্প্রদায়িক অশান্তি যারা ছড়ায় তারা ছাড়া।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায় খোলাখুলিই বলেন, ‘‘নেতাজি সম্পর্কে মোদী সরকার কপট শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে। পুরোটাই রাজ্যের ভোটের দিকে তাকিয়ে। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার সাংসদ থাকার সময় থেকেই গলা ফাটিয়ে আসছেন ২৩ জানুয়ারিকে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করতে। আর দেশপ্রেম দিবস হিসেবে দিনটিকে ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রীর আপত্তি কেন?’’
আজ দিল্লিতে শুধুমাত্র নেতাজি জয়ন্তী নিয়েই একটি সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। মন্ত্রী জানান, ২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু করে টানা এক বছর বাংলা এবং গোটা দেশজুড়ে চলবে নেতাজিকে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং উৎসব। ২৩ তারিখ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মোদী। নেতাজিকে কেন্দ্র করে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে (যার নাম, ‘আমরা নতুন যৌবনেরই দূত’) সেখানে। পাশাপাশি কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে নেতাজিকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন (‘রিভিসিটিং দ্য লিগাসি অফ নেতাজি সুভাষ ইন টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’) এবং আর্টিস্ট ক্যাম্পও হবে বলে জানানো হয়েছে। সেখানেও উপস্থিত থাকার কথা প্রধানমন্ত্রীর। প্রহ্লাদ সিংহ পটেলের কথায়, কলকাতার পাশাপাশি কটক এবং হরিপুরায় ২৩ জানুয়ারি নেতাজি জন্মোৎসব পালন হবে। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান উপস্থিত থাকবেন কটকে।