সরকার গড়ার পথ খুলে বহাল বিধানসভা, মহারাষ্ট্রে ৩৫৬, কোর্টে শিবসেনা

উদ্ধব সরকার গড়ার ব্যাপারে বিজেপি-কে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলার পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কেন এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে যেতে চাইছিলেন তিনি?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩২
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল ও এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। এপি

কোনও দলই সরকার গড়ার মতো অবস্থায় না-থাকায় মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করল কেন্দ্র। তবে এখনই বিধানসভা ভাঙা হচ্ছে না। আপাতত বিধানসভা জিইয়ে রেখেই ছ’মাসের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে কোনও দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড় করতে পারলে সরকার গড়ার রাস্তা খোলা থাকে।

Advertisement

রাজ্যে সরকার গড়তে মরিয়া শিবসেনা ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। অভিযোগ, বিজেপির তুলনায় তাদের কম সময় দিয়েছেন রাজ্যপাল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে সন্ধ্যায় দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে জানান, যে দল আগে তাঁদের দাবি মানবে, তার সঙ্গেই সরকারে যেতে তিনি রাজি। তবে এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার পাবে বিজেপি।

অথচ গত কাল কংগ্রেস এবং এনসিপির হাত ধরে সরকার গড়ার প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল শিবসেনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সমর্থনের ব্যাপারে মনস্থির করে উঠতে পারেনি সনিয়া গাঁধীর দল। ফলে রাজ্যের তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এনসিপি-কে আমন্ত্রণ জানান রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি। সময় দেওয়া হয় আজ রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। কিন্তু আজ সকাল সাড়ে ১১টায় এনসিপি নেতৃত্ব চিঠি লিখে রাজ্যপালকে জানান, এত অল্প সময়ে সরকার গড়া অসম্ভব। আরও দু’দিন সময় চাই। রাজ্যপাল সেই দাবি খারিজ করে দিতেই রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় মহারাষ্ট্র রাজভবনে।

Advertisement

সূত্রের বক্তব্য, বেলা ১২টা নাগাদ ৩৫৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগের সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন রাজ্যপাল। তাতে বলা হয়, রাজ্যপাল রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে সরকার গঠনের সম্ভাবনা খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। রাজ্যপাল নিশ্চিত যে এই মুহূর্তে কোনও দল স্থায়ী সরকার গড়তে অপারগ।

কী ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন

• সকাল ১১.৩০: এনসিপি-কে সরকার গড়ার জন্য মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু এনসিপি চিঠি দিয়ে জানাল, আরও দু’দিন সময় চাই। দাবি মানা হল না।

• দুপুর ১২.১০: ৩৫৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগের সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতিকে রিপোর্ট পাঠালেন রাজ্যপাল।

• ২.০০: প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশে সিলমোহর।

• ২.৩০: ব্রাজিল যাওয়ার জন্য বাসভবন থেকে বেরোলেন প্রধানমন্ত্রী।

• ৩.০০: ব্রাজিলের পথে উড়ে গেল প্রধানমন্ত্রীর বিমান।

• ৩.১৫: রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে শিবসেনা। শুনানি বুধবার।

• বিকেল ৪.১৫: রাষ্ট্রপতি শাসনের অনুমোদন চেয়ে রামনাথ কোবিন্দের কাছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব।

• ৫.১০: কোবিন্দের স্বাক্ষর। বিধানসভা জিইয়ে রেখেই
জারি হল রাষ্ট্রপতি শাসন।

• ৫.৩০: এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন কংগ্রেস নেতারা।

• সন্ধ্যা ৬টা: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের বাড়িতে বিজেপির কোর গ্রুপের বৈঠক।

• ৬.৩০: রিসর্টে থাকা দলীয় বিধায়কদের কাছে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে।

রাষ্ট্রপতি ভবন হয়ে ওই রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আসতেই তৎপরতা শুরু হয়। গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে আজ ছুটি ছিল মন্ত্রকে। ছুটি বাতিল করে ডেকে আনা হয় শীর্ষ আমলাদের। আজ দুপুরে ব্রাজিল যাওয়ার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল প্রধানমন্ত্রীর। এ দিকে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন। তাই তড়িঘড়ি বেলা ২টোয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হয়। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাড়ি যান স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা। সেখান থেকে দু’জনে সোজা চলে যান মন্ত্রিসভার বৈঠকে। আধ ঘণ্টার বৈঠকে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পক্ষে সায় দেয় মন্ত্রিসভা। সেই সুপারিশ নিয়ে বিকেল ৪টে নাগাদ রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছান স্বরাষ্ট্রসচিব। বিকেল ৫টা নাগাদ রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশে সই করেন রামনাথ কোবিন্দ।

আর তার পরেই রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টানোর ইঙ্গিত মহারাষ্ট্রের বাতাসে। আজ বিকেলে বিজেপির কোর গ্রুপের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। পরে দলের নেতা নারায়ণ রাণে বলেন, ‘‘ফডণবীস সরকার গড়ার সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছেন।’’ বিকেলে শরদ পওয়ার-সহ শীর্ষ এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আহমেদ পটেল, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, মল্লিকার্জুন খড়্গে প্রমুখ কংগ্রেস নেতা। শিবসেনাকে সমর্থনের প্রশ্নে আজও সরাসরি কিছু বলেনি ইউপিএ-র দুই শরিক। আহমেদ বলেন, ‘‘এনসিপি-র সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের আলোচনা চালু থাকবে।’’

এ দিকে, বিজেপির দাবি, অন্তত ২৫ জন সেনা-বিধায়ক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। তাঁরা দল ছাড়তে রাজি। পরিস্থিতি সামলাতে আজ সন্ধ্যায় মাড আইল্যান্ডের রিসর্টে থাকা দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন উদ্ধব। পরে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। আমরা করিনি।’’

উদ্ধব সরকার গড়ার ব্যাপারে বিজেপি-কে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলার পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কেন এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে যেতে চাইছিলেন তিনি? উদ্ধবের ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপি-ই তো কাশ্মীরে পিডিপি, বিহারে নীতীশ কুমার বা অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে বিরোধ ভুলে সরকার গড়েছিল।’’ ঘটনাচক্রে এ দিনই শিবসেনার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরবিন্দ সাবন্তের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর ছেড়ে আসা ভারী শিল্প মন্ত্রকের ভার দেওয়া হয়েছে প্রকাশ জাভড়েকরকে।

বিজেপি-কে চাপে রাখার কৌশলও অবশ্য ছাড়েননি উদ্ধব। তিনি জানান, রাজ্যপালের কাছে দু’দিন সময় চেয়েছিল শিবসেনা। পরিবর্তে ছ’মাস পাওয়া গিয়েছে। এই ফাঁকে কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে আলোচনা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি নিয়ে শুধু এনসিপি বা কংগ্রেসেরই নয়, শিবসেনারও কিছু বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement