প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর হাসপাতাল-কাণ্ডের পরে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে হামলা রুখতে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি উঠেছে। ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর রাস্তা খুঁজতে সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় টাস্ক ফোর্সও তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নথিই বলছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা চালু করার সময় দাবি উঠেছিল, ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে হামলা রুখতে এই আইনে কঠোর ধারা যোগ করা হোক। কিন্তু মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই দাবি খারিজ করে দেয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, কোনও বিশেষ শ্রেণির জন্য আলাদা করে আইন হতে পারে না। আইনের চোখে সবাই সমান। তার পরেও অবশ্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছিল, কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়টি খতিয়ে দেখুক। কিন্তু মোদী সরকার এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই করেনি। অথচ ২০১৯-এ কেন্দ্রীয় সরকার এ জন্য পৃথক আইনের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিল। পরে তা হিমঘরে চলে যায়।
গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে ধর্ষণের অপরাধে কঠোর কেন্দ্রীয় আইনের দাবি জানিয়েছিলেন। উল্টো দিকে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘‘আজ দেশের সব রাজ্যে মা-বোনেদের যন্ত্রণা, রাগ আমি টের পাচ্ছি।’’ মহারাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, ‘‘আমি ফের সব রাজ্য সরকারকে বলছি, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য পাপ। দোষী যে-ই হোক, সে যেন পালাতে না পারে। তাকে যারা মদত করেছে, তারাও যেন বাঁচতে না পারে। হাসপাতাল, পুলিশ, যেখানেই গাফিলতি হয়ে থাক, তার হিসেবনিকেশ করতে হবে। উপর থেকে নিচুতলা পর্যন্ত স্পষ্ট বার্তা যাওয়া দরকার।’’
বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদী সরকার নিজে কেন এই বার্তা দেওয়ার কাজ থেকে পিছিয়ে গেল?
গত ১ জুলাই থেকে ভারতীয় দণ্ডবিধি বা আইপিসি-র বদলে মোদী সরকার ভারতীয় ন্যায় সংহিতা চালু করেছে। সংসদে এই বিল পেশ হওয়ার পরে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার জন্য গিয়েছিল। স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট বলছে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন কমিটির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আর্জি জানিয়েছিল, ন্যায় সংহিতার ১১৫ নম্বর ধারায় ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে হিংসার শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হোক। যুক্তি ছিল, হাসপাতালে চিকিৎসার সময় রোগীর মৃত্যু হলে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে পরিবারের লোকেদের চড়াও হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অন্য পেশায় তা হয় না। গোটা দেশেই এই প্রবণতা রয়েছে। তাই আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন।
স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এর জবাবে বলে, যে কোনও হিংসাত্মক হামলার ক্ষেত্রে যে শাস্তি রয়েছে, তা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোনও বিশেষ শ্রেণির জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা যায় না। আইনের চোখে সকলে সমান। ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী-সহ সকলের নিরাপত্তার জন্যই সরকার দায়বদ্ধ। আজ ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে হামলায় বিশেষ শাস্তির ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে সাংবাদিক, আইনজীবীর মতো গোষ্ঠী থেকে একই দাবি উঠবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই যুক্তির পরেও বিজেপি নেতা বৃজ লালের নেতৃত্বে সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছিল, স্বাস্থ্যকর্মীদের আইনি সুরক্ষার বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার খতিয়ে দেখুক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য সংসদীয় কমিটিতে জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে একটি আইনের প্রস্তাব রয়েছে। সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য মন্ত্রক ২০১৯-এ স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী ও প্রতিষ্ঠানে হিংসা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় আইনের প্রস্তাব এনেছিল। বিভিন্ন মহলের সঙ্গে এই বিল নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু তা হিমঘরে চলে যায়।
কেন? কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে হামলার বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের মধ্যে পড়ে। যা সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। স্বাস্থ্য কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ বিষয় বলে কেন্দ্র আইন তৈরি করতেই পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়টি সামলানোর ভার রাজ্যের উপরেই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ অধিকাংশ রাজ্যেই এ বিষয়ে আইন রয়েছে।