মণিপুরে শনিবার জঙ্গিদের গুলিতে স্ত্রী, পুত্র-সহ নিহত হয়েছেন ৪৬ অসম রাইফেলসের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল বিপ্লব ত্রিপাঠী।
মণিপুরের চুড়াচাঁদপুরের কাছে জঙ্গিদের পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণ হয় তাঁর কনভয়ে। স্ত্রী অনুজা (৩৬), ছেলে আবির (৫) এবং কর্নেল ছাড়াও চার জওয়ান নিহত হয়েছেন। ফরোয়ার্ড ক্যাম্প থেকে ফেরার পথে হামলা হয় তাঁর কনভয়ের উপর।
দীপাবলিতে কর্নেলের বাবা-মা এসেছিলেন। সকলে মিলে উৎসব পালন করেন। ৬ নভেম্বর কর্নেলের বাবা-মা ফিরে যান।
সহকর্মীদের কাছে কর্নেল বিপ্লব ছিলেন ‘জোশ মেশিন’। চরম পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতেন। সহজে রেগে যেতেন না। সব সময় একটা হাসি লেগে থাকত মুখে। এমনই জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা।
অসম রাইফেলসের খুগা ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিলেন কর্নেল বিপ্লব। তাঁর স্বভাব, কর্মদক্ষতা এবং পরোপকারিতার জন্য স্থানীয়দের ‘চোখের মণি’ ছিলেন তিনি। দাবি স্থানীয় সাংবাদিকদের।
অভিবক্ত মধ্যপ্রদেশ, অধুনা ছত্তীসগঢ়ের রায়গড়ে ১৯৮০ সালে জন্ম কর্নেলের। বাবা সুভাষ ত্রিপাঠী সাংবাদিক। মা এক জন অবসরপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান। কর্নেলরা দু’ভাই। তাঁর ভাই অনয়ও শিলঙে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে কর্মরত।
রেওয়ার সেনা স্কুলে পড়তেন কর্নেল। তার পর ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি (এনডিএ)-তে যোগ দেন। এর তিনি যোগ দেন ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি (আইএমএ)-তে। সেখান থেকেই লেফটেন্যান্ট হিসেবে ২০০১-এ রানিখেতে কুমায়ুন রেজিমেন্টে যোগ দেন বিপ্লব।
কর্নেলের ঠাকুরদা কিশোরী ত্রিপাঠি স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। ঠাকুরদার কাছ থেকেই দেশসেবা করার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বিপ্লব।
এক সেনা আধিকারিক বলেন, “আমি কখনও কর্নেলকে রাগতে দেখিনি। মুখে সব সময় একটা হাসি লেগে থাকত। ব্যতিক্রমী চরিত্র ছিলেন কর্নেল। এক জন দক্ষ সেনা, এক জন ভাল স্বামী এবং এক জন ভাল বাবা— এই তিনটি দায়িত্বই সমান দক্ষতার সঙ্গে পালন করতেন তিনি।”
স্থানীয়দের সঙ্গে সেনার সদ্ভাব গড়ে তোলা, মাদকবিরোধী প্রচার চালানো, রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামের যুবকদের মধ্যে সচেতনতা প্রচার চালিয়ে তাঁদের জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার কাজ অবলীলায় করে গিয়েছেন তিনি। আর সে কারণেই অল্প সময়ের মধ্যে সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন কর্নেল।