সোনম ওয়াংচুক। ছবি: সমাজমাধ্যম।
গায়ে একটা কম্বল জড়ানো। অনশনক্লিষ্ট শীর্ণ কালিপড়া মুখ ‘বাস্তবের র্যাঞ্চো’ সোনম ওয়াংচুকের। টিভি সাক্ষাৎকারে তাঁর গলাটা অবশ্য কাঁপল না একটুও। লাদাখের পরিবেশকর্মী সোনম বললেন, ‘‘লোকে আজ জানতে চাইছে, আমাদের পাহাড়গুলোকে বিভিন্ন শিল্প সংস্থা আর আর খনি সংস্থার কাছে বেচে দেওয়াটাই লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার আসল উদ্দেশ্য নয় তো?’’
কারা এই লোকেরা? সোনম জানাচ্ছেন, এঁরা লাদাখবাসী। কেন্দ্রীয় শাসকদলের নেতাদের প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে যাঁদের। রোজ যাঁরা সোনমের সঙ্গে খোলা আকাশের নীচে মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের হাড়জমানো শীতে রাত কাটাচ্ছেন। সংখ্যায় এঁরা অন্তত আড়াইশো। এ ছাড়া রোজ সারা দিনে ভিড় জমাচ্ছেন আরও দুই থেকে পাঁচ হাজার মানুষ। ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির নায়ক ফুংসুক ওয়াংডুর মধ্যে সোনমেরই ছায়া দেখেন অনেকে। গত ১৪ দিন ধরে সোনম আমরণ অনশন করছেন। আর বলছেন, ‘‘আমরা বিদায়ী সরকারকে মনে করাতে চাই, তারা লাদাখের মানুষকে কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিভিন্ন বৈঠকে, উনিশের লোকসভা ভোট এবং কুড়ির পার্বত্য পরিষদের নির্বাচনে তারা বলেছিল, লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের রক্ষাকবচ দেওয়া হবে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই তারা বিপুল ভোটে জেতে। কিন্তু তার পর থেকে টালবাহানাই চলেছে। গত ৪ মার্চ তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, ষষ্ঠ তফসিল হবে না।’’
সোনমের বক্তব্য, লাদাখে এখন না আছে স্থানীয়দের জন্য সংরক্ষণ, না আছে গণতান্ত্রিক কাঠামো। এখানে বিধানসভা নেই, নির্বাচিত নেতা নেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। দিল্লি থেকে নিয়ন্ত্রিত একটি আমলাতান্ত্রিক শাসন চলছে লাদাখে। ফলে এক কালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চেয়ে আসা মানুষেরই আজ মোহভঙ্গ হয়েছে। লাদাখি সেনাদেরও মনোবল একই কারণে ভেঙে গিয়েছে বলে দাবি করেন সোনম। বলেন, ‘‘ওঁরা শুধু ভোটের কথা আর কতগুলো আসন জেতা যেতে পারে, সেই কথা ভাবেন। কিন্তু মানুষের কথা ভুলে যান। আমরা কেন্দ্রের কাছে এই নিশ্চয়তা চাই যে, ভবিষ্যতে তারা এ ভাবে প্রতিশ্রুতিভঙ্গ করবে না।’’ কেন্দ্রের সঙ্গে একটি বহুপাক্ষিক আইনি চুক্তিই তাঁরা চাইছেন বলে সোনম জানিয়েছেন। তাঁদের লক্ষ্য ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্তি তো বটেই, সেই সঙ্গে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদাও।
ম্যাগসাইসাই জয়ী সোনমের আন্দোলনে সহমর্মিতা জানিয়ে কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ) আগামিকাল অর্ধদিবস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। বস্তুত, সোনম অনশনে বসার আগেই পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও বন্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল লাদাখে। এই সময়ে কেডিএ এবং লে অ্যাপেক্স কাউন্সিলের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৈঠক করেন। সূত্রের দাবি, জমি, চাকরি এবং সংস্কৃতি নিয়ে লাদাখবাসীদের উদ্বেগ দূর করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৩৭১ ধারার মতো রক্ষাকবচের আশ্বাস লাদাখের প্রতিনিধিদের দিয়েছিলেন শাহ। তবে এ-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন, ষষ্ঠ তফসিলে লাদাখের অন্তর্ভুক্তি এবং পৃথক আইনসভার দাবি মানা সম্ভব নয়। সোনমদের আন্দোলনও তাই অব্যাহত।