CID

CID: ব্যবসায়ীকে তলব করতে গিয়ে বাধা পেল সিআইডি

তদন্তকারীরা জানান, ঝাড়খণ্ডের বিধায়কদের যে-টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা অশোকের ব্যবসা থেকে এসেছিল বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা, গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২২ ০৮:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

আগেও বাধা এসেছিল। ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়কের গাড়ি থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় অসমের এক ব্যবসায়ীকে তলব করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়ল পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডি। এবং বাধা এতটাই যে, অশোককুমার ধানুকা নামে ওই ব্যবসায়ীকে তলবি নোটিস ধরানো যায়নি। গুয়াহাটিতে তাঁর বাড়ি। তদন্তকারী জানান, ব্যবসায়ীকে না-পেয়ে নোটিসটি আইন অনুযায়ী স্থানীয় থানায় দিয়ে আসা হয়েছে। নোটিসে বলা হয়েছে, আজ, সোমবার সকালে ভবানী ভবনে অশোককে তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করতে হবে।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানান, ঝাড়খণ্ডের বিধায়কদের যে-টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা অশোকের ব্যবসা থেকে এসেছিল বলে জানা গিয়েছে। ধৃত বিধায়কদের সঙ্গী কলকাতার যে-শেয়ার ব্যবসায়ীর অফিস থেকে ওই টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই অশোকের নাম উঠে আসে বলে সিআইডি-র দাবি।

অশোক অসমের শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং সেই দলের এক শীর্ষ নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সেই কারণেই অসম পুলিশের একটি দল তাঁর বাড়ি ঘিরে রেখেছে বলে অভিযোগ। সিআইডি-কে সেখানে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় তারা তাঁকে তলবের কোনও নোটিস দিতে পারেনি। এমনকি ওই ব্যবসায়ীর গাড়ির পিছু নিয়েও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তদন্তকারীরা। কারণ, তাঁকে সেখানকার পুলিশ ঘিরে রেখেছিল। তার পরেই স্থানীয় থানায় নোটিসটি জমা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

গত বুধবার গুয়াহাটি বিমানবন্দের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চাইতে গিয়েও হেনস্থা হতে হয়েছিল বাংলার তদন্তকারীদের। অসম পুলিশের একটি দল সে-দিন সিআইডি-র দলকে আটক করে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সিদ্ধার্থ মুজুমদারের দিল্লির বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েও বাধা পেতে হয়েছিল সিআইডি-র তদন্তকারীদের।

৩০ জুলাই ঝাড়খণ্ডের বিধায়ক ইরফান আনসারি, রাজেশ কাছাপ এবং নমন বিক্সাল প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে হাওড়ার পাঁচলায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সেই টাকার উৎসের ব্যাপারে কোনও নথি দেখাতে না-পারায় স্থানীয় পুলিশ ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে। তাঁদের সঙ্গে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সেই ঘটনার তদন্তভার নেয় সিআইডি। ঝাড়খণ্ডের জেএমএম এবং কংগ্রেস সরকার ভাঙার জন্য ওই তিন বিধায়ককে টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। উঠে আসে অসমের এক প্রভাবশালী নেতার নামও। অভিযোগ, বিধায়ক কেনাবেচার জন্য এর আগেও কলকাতা থেকে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন ইরফান।

সিআইডি-র কাজে বাধাদানের অভিযোগ অস্বীকার করে অসম পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, গত কয়েক দিনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মোট চারটি দল তদন্তের জন্য তাদের রাজ্যে গিয়েছে। তাদের সকলকেই নিয়মানুযায়ী সব ধরনের সাহায্য করেছে অসম পুলিশ। যুগ্ম কমিশনার পার্থসারথি মহন্ত বলেন, “আমরা তাদের তদন্তের ব্যাপারে কোনও হস্তক্ষেপ করিনি। উল্টে আমরাই গাড়ি দিয়েছি। তদন্তে সাহায্য করতে ও বিভিন্ন জায়গা চেনাতে সঙ্গে দেওয়া হয়েছে পুলিশ। আতিথেয়তা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। অথচ সংবাদমাধ্যমকে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন তাঁরা। তাঁদের বিমানবন্দরেও আটকানো হয়নি, কোনও ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢুকতেও বাধা দেওয়া হয়নি।”

অশোক ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার স্ত্রী রিনিকি ভুঁইয়া শর্মার ব্যবসায়িক ঘনিষ্ঠতা তথা কোভিডের সময় পিপিই কিট ও বেশি দামে স্যানিটাইজ়ার ক্রয় কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে জুনে রাজ্য ও কেন্দ্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরগরম ছিল। অসম পুলিশ জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের বিধায়কদের হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ঘটনায় পুলিশ গুয়াহাটির পাঁচ ব্যবসায়ী নাম পেয়েছে। অশোকের বাড়িতে গিয়েও সিআইডি ঢুকতে না-পারার ঘটনায় সরব অসম কংগ্রেস। ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে অসম পুলিশ পাহারা দেবে কেন, প্রশ্ন কংগ্রেসের মুখপাত্র মনজিৎ মহন্তের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement