অনেকের মতে, এই আহ্বান যতটা না যোগী আদিত্যনাথের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি নিজের জন্য। ফাইল চিত্র।
অশান্ত গোটা বিশ্ব। এই পরিস্থিতিতে আজ উত্তরপ্রদেশের বহরাইচের জনসভায় দাঁড়িয়ে দেশের জন্য শক্তিশালী নেতৃত্বের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজনীতির অনেকের মতে, এই আহ্বান যতটা না যোগী আদিত্যনাথের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি নিজের জন্য। কারণ, তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীর শপথ নেওয়ার অনেকটাই নির্ভর করছে উত্তরপ্রদেশে পুনরায় জেতার উপরেই।
পৃথিবী জুড়ে কোভিড সংক্রমণের সমস্যা তো ছিলই, নতুন করে যোগ হয়েছে ইউক্রেন সঙ্কট। যার জেরে যুযুধান আমেরিকা-রাশিয়া। এই আবহে উত্তরপ্রদেশের চতুর্থ দফা ভোটের আগে বিশ্বের টালমাটাল অবস্থার কথা তুলে ধরে আজ সরব হন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ে গোটা দুনিয়ায় উথালপাথাল চলছে। ফলে এই সময়ে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মজবুত কাঁধের প্রয়োজন।’’ মোদীর কথায়, ‘‘টাফ টাইমের জন্য টাফ লিডার প্রয়োজন।’’ সেই ‘টাফ লিডার’ কে, সেই প্রশ্নে নীরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিধানসভা ভোটের আগে স্বভাবতই যোগীকে জেতানোর বার্তা দিতে মোদী ওই মন্তব্য করেছেন বলে মনে করা হলেও রাজনীতির অনেকের মতে, আসন্ন লোকসভায় মোদীর তৃতীয় বারের জয় অনেকাংশেই নির্ভর করবে উত্তরপ্রদেশের উপর। বিজেপি এ যাত্রায় উত্তরপ্রদেশে জিততে পারলে পরবর্তীতে মোদীর জন্য সুবিধা হয়ে যবে। সেই কারণে উত্তরপ্রদেশে যোগীকে জিতিয়ে আনার মাধ্যমে আসন্ন লোকসভায় নিজের জয়কে নিশ্চিত করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।
তাই আজ আন্তর্জাতিক সমস্যার কথা ছুঁয়েই ফিরে এসেছেন বাস্তবের জমিতে। এই মুহূর্তে বেওয়ারিশ গরু যে উত্তরপ্রদেশের মানুষের কাছে জ্বলন্ত সমস্যা এবং সেই সমস্যার নিদান যে বিজেপির কাছে রয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন মোদী। অথচ, পাঁচ বছর আগে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের কথা ভেবে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে গোরক্ষা অভিযানে নেমেছিল সরকার। পাঁচ বছরের শেষে রাজ্যের বেওয়ারিশ গরুর সংখ্যা এখন ১২ লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে। আর তাই মোদীকে আজও বলতে হয়েছে, ‘‘ছুট্টা জানোয়ারের সমস্যার নিদান আমাদের কাছে রয়েছে। ১০ মার্চ ক্ষমতায় বসলেই সমস্যার সমাধান করবে সরকার।’’ কিন্তু বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন, সমাধান যখন আছে তখন এত দিন তা প্রয়োগ হল না কেন?
গো-রক্ষায় হিতে বিপরীত বুঝেই এ যাত্রায় মেরুকরণের প্রশ্নে মোদী তথা বিজেপি শিবিরের অন্যতম হাতিয়ার হল সন্ত্রাসবাদ। সম্প্রতি গুজরাতের আদালত ৩৮ জন সন্ত্রাসবাদীকে স্বামী নারায়ণ মন্দিরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। আদালতের ওই সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে আজ সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে অপরাধীদের ‘যোগ’ নিয়ে সরব হন মোদী। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আদালত যখন অপরাধীদের শাস্তি দিয়েছে তখন তা নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলছে কিছু বিরোধী দল?’’
মোদী আজ যখন চরকিপাক কেটে মণিপুর থেকে উত্তরপ্রদেশ উড়ে এসে ভাঙা গলায় বক্তব্য রাখছেন, তখন হরদৌইয়ের কাছে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার গাড়ি আটকে দেন বেশ কিছু বিজেপি সমর্থক। কংগ্রেস নেত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে অনেকেই এগিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে হাত মেলান। অনেক বিজেপি মহিলা কর্মী ‘দিদি দিদি ওই ব্রেসলেটটি দিন’-বলে কংগ্রেসের প্রচারে ব্যবহৃত ব্রেসলেট চেয়ে নেন প্রিয়ঙ্কার থেকে। ভিডিয়োতে প্রিয়ঙ্কাকেও দেখা যায়, বার বার গাড়ির আসন থেকে ইস্তাহার ও ব্রেসলেট বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে। ভোটের প্রচারে নেমে এবার মহিলাদের মধ্যে ব্রেসলেট বিলিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির পুরুষ কর্মীরা ইস্তাহার চেয়ে নেন প্রিয়ঙ্কার কাছে। পরিস্থিতি এমন হয় যে শেষ পর্যন্ত প্রিয়ঙ্কা গাড়ি থেকে অর্ধেক শরীর বার করে উপস্থিত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে হাত মেলান।