প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের গুলি চালানো ঘিরে ফের উত্তেজনা প্যাংগং লেক এলাকায়।
পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেক, গালওয়ান-সহ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বিপুল সেনা মোতায়েন করে আগ্রাসন শুরু করেছিল চিন। তার জেরে গালওয়ান উপত্যকায় ঘটে গিয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এ বার সেই চিনের বাহিনীই ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলল। যদিও ভারতীয় সেনা সূত্রের দাবি, চিনের বাহিনীই প্রথম গুলি চালিয়েছে। ভারত শুধু তার জবাব দিয়েছে। এই ঘটনার পর প্যাংগং লেক এলাকায় বিপুল সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে শুরু করেছে ভারত।
ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, সোমবার রাতে চিনের তরফেই প্ররোচনা দেওয়া শুরু হয়। চিনের সেনাবাহিনী ভারতের দখলে থাকা একটি পাহাড়ের চূড়া দখলের চেষ্টা করে। কিন্তু ওই চূড়ায় মোতায়েন রয়েছে ভারতীয় সেনা। ওই অভিযানের সময় শূন্যে গুলি চালায় চিনের বাহিনী। পাল্টা জবাব হিসেবে সতর্কতামূলক গুলি চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনীও। সেনার একটি সূত্রের বক্তব্য, সময়মতো দু’পক্ষেরই উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকরা হস্তক্ষেপ না করলে ঘটনাটি মারাত্মক সংঘর্ষের আকার নিতে পারত।
যদিও চিনের দাবি, ভারতই প্রথম গুলি চালিয়েছে। পিএলএ-র এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চিনের সেনাবাহিনীও ভারতের গুলি চালানোর জবাব দিয়েছে। যদিও সেই জবাব গুলি চালিয়ে নাকি অন্য কোনও ভাবে, তা স্পষ্ট করেননি ওই মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় সেনা প্যাংগং লেকের দক্ষিণ পাড়ে এবং শেনপাও পার্বত্য এলাকায় বেআইনি ভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ঢুকে পড়ে। সেই অভিযানের সময় চিনের টহলরত বাহিনীর উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায় ভারতীয় সেনা। তার জেরে স্থিতাবস্থা ফেরাতে পাল্টা পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয় পিএলএ।’’ ‘খুব খারাপ প্রকৃতির ও গুরুতর প্ররোচনামূলক’ আখ্যা দিয়ে বেজিংয়ের বক্তব্য, ‘‘ভারতীয় বাহিনীকে অবিলম্বে এই ভয়ঙ্কর কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: শীতেও কি সেনা থাকছে লাদাখে?
সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত গত ২৯-৩০ অগস্ট রাতে। চুক্তি অনুযায়ী লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় রাতে কোনও অভিযান চালানো যায় না। কিন্তু ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, ওই রাতে চিনা বাহিনী সেই সে সবের তোয়াক্কা না করে স্থিতাবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা করে। প্যাংগং লেকের দক্ষিণ পাড়ে বিপুল সেনা মোতায়েন করে বেজিং। রাতে ওই বাহিনী পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে এবং এলাকা দখলের চেষ্টা করে। তবে ভারতীয় সেনা তা রুখে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: শিক্ষানীতি নিয়ে কথা চান মোদী, কেন এড়ানো হল সংসদ, প্রশ্ন
এর পর ৩১ অগস্ট দিনের বেলা ফের অভিযান শুরু করে পিএলএ। ভারতের দখলে থাকা একাধিক পাহাড়ের চূড়া থেকে ভারতীয় বাহিনীকে সরিয়ে নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে বেজিং। ভারতীয় সেনা জওয়ানদের চিনা বাহিনী ঘিরে ফেলে বলেও অভিযোগ। তবে সেই সময় ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের সেনা অফিসারদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটেও গিয়েছিল। কিন্তু চিনের এই আগ্রাসনকে ভারত হাল্কা ভাবে না নিয়ে বরং প্যাংগং উপত্যকায় সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে। সোমবার রাতের ঘটনার পর আরও সেনা মোতায়েন শুরু করেছে ভারত।
১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় দু’দেশের সেনার মধ্যে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার এক কমান্ডার ও ১৯ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। তার পর থেকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। দু’দেশই বিপুল সেনা মোতায়েন করে। তার পর জুলাইয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র ভিডিয়ো বৈঠকে কিছুটা জট খোলে। দু’পক্ষই ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়। সেইমতো গালওয়ান থেকে সেনা সরালেও প্যাংগং লেকে এখনও বিপুল সেনা মোতায়েন করে রেখেছে বেজিং।