প্রতীকী ছবি।
বয়স নয়, বরং যে শিশুরা জন্ম থেকে ক্রনিক রোগের শিকার বা যাদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তাদের আগে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র। তবে শিশুদের কবে থেকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে, তার কোনও দিশা দেখাতে পারেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
দেশে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আগেই শিশুদের করোনা টিকাকরণ শুরু করতে চায় কেন্দ্র। সংসদে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া দাবি করেছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিশুদের টিকা প্রস্তুত হয়ে যাবে। কিন্তু কবে? তার কোনও স্পষ্ট দিশা দেখাতে ব্যর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আজ শিশুদের টিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল বলেন, ‘‘দিনক্ষণ এখনই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে ভারত বায়োটেক ও জাইডাস সংস্থার টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’’ একই সঙ্গে, আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মতো এ ক্ষেত্রেও যারা ছোট বয়স থেকে বিভিন্ন রোগে ভুগছে, তাদের টিকা দেওয়ার প্রশ্নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যে সব শিশুর কো-মর্বিডিটি আছে, তারাই আগে টিকা পাবে। তবে বিনোদ পলের কথায়, ‘‘গোটাটাই নির্ভর করছে প্রতিষেধক সরবরাহের উপরে। যদি দেখা যায়, জোগানের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি, সে ক্ষেত্রে সকলকে একসঙ্গে টিকা দেওয়া হবে। কোনও বৈষম্য করা হবে না।’’
কেন্দ্রের দাবি, গত জুলাই পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে প্রায় ৫০ কোটি টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় সাত মাসের টিকাকরণের শেষে দেখা যাচ্ছে, ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন যথাক্রমে ৫৫.৬ শতাংশ ও ২৭ শতাংশ ব্যক্তি। অন্য দিকে, ৪৫-৬০ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় প্রাপ্তি হল ৫২শতাংশ ও ১৯ শতাংশের। যা মোটেই আশাপ্রদ নয় বলেই মত স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। আজ বিনোদ পল বলেন, ‘‘৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের করোনা হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে বয়স্কদের টিকাকরণ আগে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু পরিসংখ্যান আশাপ্রদ নয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে টিকাকরণের গতি আরও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, একমাত্র টিকাকরণই মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে পারে।’’ তাই বয়স্কদের টিকা নেওয়ার প্রশ্নে আরও এগিয়ে আসার অনিরোধ করেছেন তিনি।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে টিকাকরণের হার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে আশাব্যঞ্জক না হলেও, গত সাত মাসে দেশে ধাপে ধাপে টিকাকরণের গতি বেড়েছে বলে আজ দাবি করেছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘প্রাথমিক দ্বিধা, পরিকাঠামোগত সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হওয়ায় টিকাকরণ অনেক বেড়েছে। প্রথম ১০ কোটি টিকাকরণ হতে যেখানে ৮৫ দিন সময় লেগেছিল, সেখানে ৩০ কোটি থেকে ৪৫ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে সময় লেগেছে মাত্র ৩৫ দিন। আগামী দিনে কোভ্যাক্সিনের উৎপাদন আরও বাড়লে টিকাকরণ আরও দ্রুত গতিতে হবে বলে দাবি করেছেন বিনোদ পল। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত বায়োটেকের বেঙ্গালুরুর শাখায় পুরোদমে কাজ শুরু হলেই সেপ্টেম্বর থেকে দেশে কোভ্যাক্সিনের উৎপাদন বাড়তে চলেছে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, ফাইজ়ারের মডার্নার মতো বিদেশি টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে এখনও আলোচনা চলছে। ভারতে বিক্রি শুরু করা নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।