ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গি আগে থেকেই ছিল। এ বার চিকুনগুনিয়াতেও কাবু রাজধানী! সাধারণ ভাবে প্রাণঘাতী নয় মশাবাহিত এই রোগ। তবু তাতেই এখন পর্যন্ত দিল্লিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই এক হাজার ছাড়িয়েছে। সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ ছাড়া ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ায় প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়ছে রোগীদের ভিড়।
এর মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। প্রশ্ন উঠেছে, রাজধানীতে মশাবাহিত রোগের এই হানাদারি ঠেকানোর দায়িত্ব কার। দিল্লির সরকারে এখন আম আদমি পার্টির সরকার। কিন্তু আপের বেশির ভাগ ভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতাই এখন রাজ্যের বাইরে। গলায় অস্ত্রোপচারের জন্য বেঙ্গালুরু গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়াও রাজ্যে নেই। শিক্ষামূলক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ফিনল্যান্ডে গিয়েছেন। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন গোয়ায় গিয়েছিলেন আসন্ন নির্বাচনে দলের প্রস্তুতি দেখতে। রাজনৈতিক টানাপড়েনের জেরে দ্রুত এ দিন সন্ধেয় দিল্লি ফিরেছেন তিনি। তবে সঙ্কটের মুহূর্তে দিল্লিতে হাজির না থাকা নিয়ে বিজেপি ও বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। দিল্লি হাইকোর্ট সম্প্রতি এক রায়ে উপ-রাজ্যপালের প্রধান্যের কথা জানিয়ে দেওয়ায় আপ সরকার দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতির দায় নিতে আর তেমন আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ উঠছে। যার কড়া জবাব দিয়ে কেজরীবাল পাল্টা মনে করিয়ে দিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে উপ-রাজ্যপাল নজীব জঙ্গও তো দেশের বাইরে। চিকুনগুনিয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় উপ-রাজ্যপাল জঙ্গের পাশাপাশি বিজেপি ও তাদের শাসিত শাসিত পুরসভাগুলিকে কাঠগড়ায় তুলছে দিল্লি সরকার।
তবে এমন পরিস্থিতিতে একে অপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে একজোট হয়ে লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা। চিকুনগুনিয়া ঠেকাতে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যগুলিকে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এমনকী, রাজ্যগুলিকে সব রকম সাহায্যেরও আশ্বাস দিয়েছেন নড্ডা। তিনি বলেন, ‘‘চিকুনগুনিয়াই হোক বা ডেঙ্গিই হোক, আতঙ্কের কিছু নেই। রাজ্যগুলিকে সব রকম সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত। এটা দোষারোপের সময় নয়। কেন্দ্র আর রাজ্যকে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’’
সূত্রে খবর, দিল্লির দক্ষিণ অংশেই চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গি ছড়িয়েছে বেশি প্রভাব পড়েছে বেশি। চিকুনগুনিয়ায় গত ১ সেপ্টেম্বর হিন্দু রাও হাসপাতালে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল। গত কাল তিন জনের মৃত্যু হয় স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে। তিন জনেরই বয়স ষাটের উপরে। এর আজ সন্ধেয় ওই হাসপাতালেই ৭৫ বছর বয়সি এক বৃদ্ধের মত্যু হয়েছে। গত কাল ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। তখনই তাঁর শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। পরে পরীক্ষায় চিকুগুনিয়া ধরা পড়ে।
এই রোগ রেহাই দিচ্ছেন না নেতা-মন্ত্রী বা সাংসদ-বিধায়কদের। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর থেকে বিজেপি সাংসদ বরুণ গাঁধী— সকলেই চিকুনগুনিয়ায় কাবু। যদিও চিকিৎসকদের আশ্বাস, চিকুনগুনিয়ায় প্রাণের ঝুঁকি থাকে না। তবে কিছু বিরল পরস্থিতিতে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই রোগ অনেক সময় মারত্মক আকার ধারণ করে।