এম কে স্ট্যালিন। ফাইল চিত্র।
তামিলনাড়ুতে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে হামলার ‘ভুয়ো’ ভিডিয়ো ছড়িয়েছে। ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্বেগ কাটাতে আজ তিরুনেলভেলির কারখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। অন্য দিকে তামিলনাড়ুতে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে হামলার ভুয়ো খবর প্রচারের জন্য একটি পোর্টালের শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে তামিলনাড়ু পুলিশ।
গত কয়েক দিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিয়ো নিয়ে উদ্বেগ ছড়ায় তামিলনাড়ুতে নিযুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে। একটি পোর্টালেও দাবি করা হয়, দক্ষিণ ভারতের ওই রাজ্যে বিহারি শ্রমিকদের নিশানা করা হচ্ছে। দলে দলে শ্রমিকদের তামিলনাড়ু ছেড়ে যাওয়ার ভিডিয়োও ছড়ানো হয়েছে। তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করে, ওই খবর ও ভিডিয়ো পুরোপুরি ভুয়ো। হোলির সময়ে শ্রমিকদের বিহার ও অন্য রাজ্যে ফেরার ভিডিয়োকে তামিলনাড়ু ছেড়ে যাওয়ার ভিডিয়ো বলে প্রচার করা হয়েছে বলে জানায় তারা।
ঘটনার জেরে তামিলনাড়ুতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠায় বিহার সরকার।আজ তিরুনেলভেলিতে একটি দস্তানা তৈরির কারখানায় নিযুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন। তামিলনাড়ু সরকারের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ওই কারখানার পরিযায়ী শ্রমিকেরা স্ট্যালিনকে জানিয়েছেন তাঁরা দীর্ঘদিন ওই রাজ্যে রয়েছেন। অনেকের পরিবারও সেখানে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের সঙ্গে ভাইয়ের মতোই আচরণ করেন। তাঁদের মনে ভয় নেই। বরং তামিলনাড়ুতেও নিজের রাজ্যের মতোই নিরাপদে রয়েছেন বলে মনে করেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দেন।
একই সুর শোনা গিয়েছে হোলির জন্য বাড়িমুখী পরিযায়ী শ্রমিকদের মুখে। চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে গত কয়েক দিন ধরেই ভিড় জমাচ্ছেন শ্রমিকেরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বছর বিয়াল্লিশের সন্তোষ। বাড়ি ওড়িশায়। বললেন, ‘‘ভয়ে নয়, পরিবারের সঙ্গে হোলি কাটাব বলে দু’সপ্তাহের জন্য বাড়ি যাচ্ছি। শরীরটাও বিশেষ ভাল নেই।’’ আর এক ওড়িশাবাসী সরোজকুমার সাহুর দাবি, তামিলনাড়ুতে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার অনেক তামিল বন্ধু আছে। কেউ মারতে এলেও তারা বাঁচাবে।’’
বিহারের মোহন দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মতো শ্রমিকদের জন্য তামিলনাড়ুতে অনেক সুযোগ আছে। আমি নিশ্চয়ই ফিরব।’’ চেন্নাইয়ে ক্রেন অপারেটরের কাজ করে মাসে ২০ হাজার টাকা রোজগার করেন বিহারের সুধীর। বললেন, ‘‘১০ হাজার টাকা পেলেও বিহারে থাকতে রাজি আছি। কিন্তু বিহার সরকার আমাদের জন্য কাজের সুযোগই তৈরি করতে পারেনি।’’শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ কাটাতে ডিএমকে সরকারের উদ্যোগে খুশি তামিলনাড়ুতে আসা বিহার সরকারের প্রতিনিধিরাও। বিহারের গ্রামীণ উন্নয়ন সচিব বালামুরুগানের কথায়, ‘‘ভিডিয়োগুলি ছড়ানোর পরে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এখন সব কিছুরই ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছে।’’ অন্য দিকে যে পোর্টালে তামিলনাড়ুতে শ্রমিকদের উপরে হামলার ‘ভুয়ো’ খবর প্রকাশিত হয়েছিল সেটির সিইও রাহুল রোশন, সম্পাদক নূপুর শর্মা ও অন্য কর্মীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে তামিলনাড়ু পুলিশ।