ভিন্ জাতে ভালবেসে প্রতি বছর অনেক মৃত্যু, উদ্বিগ্ন দেশের প্রধান বিচারপতি। ফাইল ছবি।
ভিন্ জাতে ভালবেসে বা বিয়ে করে প্রতি বছর ভারতে বহু মানুষকে মরতে হয়। একটি বিষয়ে বক্তৃতায় এমনই মন্তব্য করলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ভিন্ জাতে বিয়ে করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবার-পরিজনকে পাশে পাওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে ১৯৯১ সালের একটি ঘটনার উল্লেখও করেছেন বিচারপতি।
আমেরিকার ‘টাইমস’ ম্যাগাজ়িনে ওই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। বিচারপতি জানান, ১৯৯১ সালে উত্তরপ্রদেশে ১৫ বছরের এক কিশোরী তথাকথিত নিম্নবর্ণের এক যুবকের সঙ্গে বাড়ির অমতে পালিয়ে গিয়েছিল। তবে বেশি দিন তাঁরা একসঙ্গে থাকতে পারেননি। অভিযোগ, গ্রামবাসীরা মিলে যুগলকে খুন করেছিলেন। এমনকি তাঁরা কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্তও নন। কারণ, তাঁরা মনে করেছিলেন, সমাজের নীতি অনুযায়ী তাঁরা সঠিক কাজ করেছেন।
আইন এবং নৈতিকতা বিষয়ে একটি বক্তৃতার মধ্যেই বিচারপতি চন্দ্রচূড় এমন মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিল ‘আইন এবং নৈতিকতা: সীমা এবং সার্থকতা’। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি জানান, আইন সাধারণত বহির্জগতের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু নৈতিকতা অভ্যন্তরীণ বিষয়। তার আবেদন বিবেকের কাছে। নৈতিকতা মানুষের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
প্রধান বিচারপতি নিজেই প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সকলের নৈতিকতা কি সমান হয়? আমার নীতিবোধ যা বলে, অপরের নীতিবোধও যে একই কথা বলবে তার নিশ্চয়তা আছে কি?’’ বরাবর সমাজ-অর্থনীতি এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের মতামতই প্রাধান্য পায় বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রেণির উপরে ক্ষমতাসীনদের ছড়ি ঘোরাতে দেখা যায় হামেশাই।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সমাজে যাঁরা নিম্নবর্ণের বলে চিহ্নিত, তাঁদের নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করতেই দেওয়া হয় না। বরাবর তাঁদের দমিয়ে রাখা হয়। এমনকি, সমাজের ‘নিয়ম’ অনুযায়ী, সব রকমের পোশাক পরার অধিকারও দেওয়া হয় না দলিতদের। এ বিষয়ে আইন তৈরি করেও বিশেষ লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। অথচ, ভারতের সংবিধানে সকল নাগরিকের সব রকম মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা রয়েছে। কোনও প্রভাবশালী সে অধিকার কমাতে পারেন না।