আরএসএসের ছাত্রশাখা এবিভিপি-র জাতীয় সভাপতি সুব্বাইয়া সন্মুগম। ছবি: সংগৃহীত।
প্রথমে প্রতিবেশীর পার্কিং লট দখল করে ব্যবহারের অভিযোগ, তার পরে প্রতিবেশী ভাড়া চাইলে শুরু হয় হুমকি ও হেনস্থা। প্রতিবেশী ৬২ বছরের বৃদ্ধা পুলিশে অভিযোগ করার পরে এ বার তাঁর দোরগোড়ায় প্রস্রাব করে দিলেন অভিযুক্ত। হাসপাতালে ব্যবহার করা মাস্ক ও অন্য জঞ্জাল এনে ফেললেন প্রতিবেশীকে ‘শিক্ষা’ দিতে।
তার পরেও নানাবিধ চাপে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে হচ্ছে বৃদ্ধাকে, কারণ অভিযুক্ত বিরাট প্রভাবশালী মানুষ। আরএসএসের ছাত্রশাখা এবিভিপি-র জাতীয় সভাপতি। নাম সুব্বাইয়া সন্মুগম। এই আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা বিজেপি এখন গোটা দেশের শাসক দল। বিষয়টি সম্পর্কে সন্মুগম নীরব থেকে সাফাই দিতে এগিয়ে দিয়েছেন তাঁর সংগঠনকে। এবিভিপি-র কোনও নেতার স্বাক্ষর ছাড়া একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশীর সঙ্গে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি, আর তা থেকে মনোমালিন্য হয়েছিল তাদের সভাপতির। সে সব মিটে গিয়েছে। পর ক্ষণেই সংগঠনটি আবার এই অভিযোগও করেছে, তাদের জাতীয় সভাপতির ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য ওই প্রতিবেশী মিথ্যা ও মনগড়া অভিযোগ করেছিলেন।
বৃদ্ধার পরিবারের এক জনের পাল্টা প্রশ্ন— মিথ্যা অভিযোগ? ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা? ওই নেতা যা করেছেন, সিসিটিভির ফুটেজে তা স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। নিয়মিত গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া তো সামান্য, ঘরের বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন। হাসপাতালের জঞ্জাল এনে ঢেলে দিয়েছেন ঘরের সামনে, তার মধ্যে ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া মাস্কও ছিল। সেই সব ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন ‘নানা মহলের’ চাপে পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে যে তাঁরা পিছু হটছেন, জানিয়েছেন তিনি। আবাসিকদের কমিটিও তাঁদের বুঝিয়েছে, জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে প্রতিকার না-পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। বলছেন, ‘‘যত বড় নেতাই হোন, আমরা এর বিচার চাই। আমাদের হাতে সব প্রমাণ মজুত। এখন পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলেও পরে আদালতে যাব আমরা!’’
ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝির কানে ঘটনাটি পৌঁছনোর পরে মুখ্যমন্ত্রী ই পালানিস্বামীকে চিঠি দিয়ে তিনি প্রতিকার চেয়েছেন। অভিযোগকারী বৃদ্ধা ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আর্জিও জানিয়েছেন কানিমোঝি। তবে পুলিশের দাবি, এফআইআর হলেও তা প্রত্যাহারের কথা তাদের জানা নেই। চেন্নাই পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, বৃদ্ধা এফআইআর করার পরে তাঁরা মামলা শুরু করেছেন। এর পরে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হলে বৃদ্ধাকে আদালতে যেতে হবে।
অভিযুক্ত সন্মুগম সরকারি কিলপাউক মেডিক্যাল কলেজের অঙ্কোলজির বিভাগীয় প্রধান। এক জন সরকারি কর্মচারী কী করে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতার পদে থাকেন, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু অভিযোগ, বিজেপির সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া থাকার কারণে সন্মুগমের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি এআইডিএমকে সরকার। কানিমোঝি টুইটে অভিযোগ করেছেন, ‘বৃদ্ধার অভিযোগ পেয়েও চোখ বুজে থেকেছে পুলিশ। কোনও বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তারা এই কাজটাই করে!’