স্যালাড শুধু মাত্র সাইড ডিশ নয়। তা পুষ্টির অন্যতম অংশও বটে। নিজের ১০ ফুট বাই ১০ ফুট ঘরে স্যালাড তৈরির অন্যতম উপাদান মাইক্রোগ্রিন চাষ করেই আজ সফল ব্যবসায়ী তামিলনাড়ুর বিধ্যাধরন নারায়ণ।
স্যালাডে বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি দেওয়া হয় মাইক্রোগ্রিনও। শুধুমাত্র স্যালাডের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই এটি দেওয়া হয়, তা নয়। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ, জিঙ্ক, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উপাদান রয়েছে। যা শরীর গঠনের অন্যতম মৌলিক ও জরুরি উপাদান।
বিদ্যাধরণ মাইক্রোগ্রিনের চাষ শুরু করেন ২০১৮-র অক্টোবরে। মাত্র ১৫ হাজার টাকা নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি।
১০ ফুট বাই ১০ ফুট ঘরের মধ্যেই করছিলেন চাষ। এখন মাইক্রোগ্রিন চাষ করে তিনি প্রতি মাসে রোজগার করেন ৮০ হাজার টাকা। কেমন ছিল বিদ্যাধরনের সেই জার্নি?
সৈয়দপেটের মডেল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছিলেন বিদ্যাধরন। পড়াশোনা শেষ করে একটি সংস্থায় ১০ থেকে ১৫ বছরের স্কুলছুট ছেলেমেয়েদের পড়ানোর কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে প্রায় দু’বছর কাজ করেন।
তার পর যোগ দেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায়। সেখানে শিক্ষার অধিকার নিয়ে প্রায় ১০ বছর কাজ করেন। সেই কাজ ছেড়ে ২০০৩ তৈরি করেন নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শিশুদের অধিকার নিয়েই কাজ করত তাঁর সংস্থা।
সেই কাজ থেকে চাষবাস কী ভাবে? এই প্রশ্নের জবাবে এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘আমার পরিবার কোনও দিনই চাষের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার বাবা সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন। তবে চাষের প্রতি আমার আগ্রহ ছোট থেকেই।’’
এর আগে চেন্নাই থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে উথিরামেরুরে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে কিনেছিলেন জমি। সেখানে ধান ও বাদাম চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বেশ কয়েক বছর পরও তেমন লাভ হচ্ছিল না। তাই ২০১১ সালে সেই চাষ পুরোপুরি বন্ধ করে দেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিদ্যাধরন বলেছেন, ‘‘প্রতি বছর ধান চাষ থেকে খুব সামান্য লাভ হত। সব খরচ বাদ দিয়ে আমার দশ হাজার টাকা মতো থাকত। ২০১১ তে আমি পুরোপুরি ভাবে চাষ বন্ধ করে দিই।’’
সেই চাষ করতে গিয়ে তাঁর ক্ষতিও হয়েছিল অনেক। যার জেরে ২০১৩-তে বন্ধ করে দেন নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার পর গাড়ি কিনে ট্রাভেলিং এজেন্সির ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সেই ব্যবসাও জমেনি। শেষমেশ নিজের তিনটি গাড়ির মধ্যে দু’টি বিক্রি করে দেন। একটি গাড়ি রেখে দেন নিজের জন্য।
এক বার চাষের ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হলেও মন থেকে চাষের ইচ্ছা মুছে ফেলেননি। ২০১৪তে মাইক্রোগ্রিনের ব্যাপারে জেনেছিলেন তিনি। গাড়ির ব্যবসার পর সেই মাইক্রোগ্রিন উৎপাদনের ব্যাপারে মন দেন বিদ্যাধরন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘‘চাষ ছেড়ে দিলেও গাছ নিয়েই কাজ করতে চাইছিলাম। বাজারের চাহিদা দেখে ২০১৪তে জানতে পারে মাইক্রোগ্রিন নিয়েই কাজ শুরুর কথা ভাবলাম।’’
এই কাজে করতে তিনি কিনলেন ট্রে, কোকো পিট, ভার্মি কম্পোস্ট ও বীজ। ব্যবহৃত না হওয়া ফ্রিজও কিনলেন তিনি। সেই ফ্রিজের ভিতর ট্রে গুলি রেখেই মাইক্রোগ্রিন তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।
তবে এই কাজে বিশেষ কারও সাহায্য নেননি বিদ্যাধরন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী জয়ারানি এই মাইক্রোগ্রিন তৈরির কাজ শুরু করেন একটি ছোট্ট ঘরে।
বীজ রোপনের পর ১০-১৫ দিনে তৈরি হয়ে যেত মাইক্রোগ্রিন। সেগুলি বেড়ে গেলে তুলে ফেলতেন তাঁরা। তার পর ছোট ছোট প্যাকেটে ভরে ফেলতেন।
ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়তে থাকে মাইক্রোগ্রিনের। বিদ্যাধরনও মাইক্রোগ্রিন তৈরির পরিমাণ বাড়াতে শুরু করেন। এর পর বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোগ্রিন তৈরি শুরু করেন তাঁরা। বর্তমানে তাঁরা ছয় থেকে আট ধরনের মাইক্রোগ্রিন ফলান।
এখনও পর্যন্ত তাঁরা মোট ১৮ ধরনের মাইক্রোগ্রিন তৈরি করেছেন। সানফ্লাওয়ার, র্যাডিশ, বিটরুট, অমরনাথ, ব্রকোলি, ক্যাবেজ, আলফা-আলফা তাদের মধ্যে অন্যতম। বতর্মানে তিনি চেন্নাইয়ের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় প্রায় ৪৫ কেজি মাইক্রোগ্রিন সরবরাহ করে থাকেন।
কী ভাবে ঘরের মধ্যে এই মাইক্রোগ্রিন তৈরি করেন তিনি? প্রথমে জলের মধ্যে বীজ তিন ধরে ভিজিয়ে রাখেন। তার পর সেই ট্রে অন্ধকার ঘরে রেখে দেন।
সেই বীজের অঙ্কুর বের হলে মাটি ভর্তি ট্রের মধ্যে স্থানান্তরিত করেন। তার পর সেই ট্রে এমন জায়গায় রাখেন, যাতে আলো পেলেও সরাসরি সূর্যালোক না পড়ে। এ ভাবে পরবর্তী ষষ্ঠ ও সপ্তম দিন অবধি সেই ট্রের উপর জল স্প্রে করতে থাকেন।
সপ্তম দিনে এই মাইক্রোগ্রিনের ট্রেগুলিকে বড় ট্রেতে স্থানান্তরিত করা হয়। এই সব ট্রে-র বিশেষত্ব হল, উপর দিয়ে নয়, নীচ দিয়ে এতে জল ভরতে হয়।
এ ভাবে এক সপ্তাহ রাখা হয়। এই সময়ে মাইক্রোগ্রিনও বাড়তে থাকে। এক সপ্তাহ পর মাইক্রোগ্রিন খাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠে। তার পর সেগুলিকে প্যাকেটে বন্দি করেন তিনি। তার পর অর্ডার অনুসারে সরবরাহ করেন বাজারে।
মাত্র কয়েক বছর আগে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা ব্যবসা থেকে বিদ্যাধরনের এখন মাসে লাভ ৮০ হাজার। ব্যবসা আরও বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনাও তাঁর রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যাধরন।