ইউজিসি চেয়ারম্যান তথা সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ এম জগদেশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
‘একতরফা ভাবে পাঠ্যসূচিতে বদল’ এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই তা করার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রীয় শিক্ষা অনুসন্ধান এবং প্রশিক্ষণ পরিষদ বা এনসিইআরটি-র বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকের ৩৩ জন লেখক। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ওই নীতি বদলকে সমর্থন জানানোর জন্য আসরে নামলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান তথা সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ এম জগদেশ কুমার। তাঁর সঙ্গেই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ ৭৩ জন শিক্ষাবিদকেও নামানো হল। কেন্দ্রের মোদী সরকারের হয়ে মুখ খুলে এই শিক্ষাবিদদের দাবি, ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির প্রণয়নকে আটকে দেওয়ার জন্যই এমন করা হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বে সঙ্ঘের নির্দেশ মেনে শিক্ষায় গৈরিকীকরণের অভিযোগ উঠেছে অনেক আগেই। তারই অঙ্গ হিসেবে জীববিদ্যা, রসায়ন, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচিতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে বলে এ বারে অভিযোগ উঠেছে। এনসিইআরটি-র অনুমোদিত বিভিন্ন বিষয়ের একাধিক লেখকের অভিযোগ, এই সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বাদ দেওয়ার আগে তাঁদের এবং শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে যোগেন্দ্র যাদব, সুহাস পালসিকর-সহ ৩৩ জন শিক্ষাবিদ এনসিইআরটি-কে পাঠানো চিঠিতে ‘পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন কমিটি’ (টিডিসি) থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি এড়াতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ইউজিসি-র চেয়ারম্যান এম জগদেশ কুমারকে আসরে নামানো হয়। তিনি দাবি করেন, ওই শিক্ষাবিদদের অভিযোগ অর্থহীন। পাঠ্যসূচিতে এই বদল যুক্তিযুক্ত। এর আগেও পাঠ্যক্রমে বদল হয়েছে বলে যুক্তি দেন তিনি। পাঠ্যসূচির বদলকে সমর্থন জানানোর জন্য জেএনইউ-এর উপাচার্য শান্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিত-সহ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানদের সামনে আনা হয়। এক লিখিত বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, যে শিক্ষাবিদেরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁরা ক্ষুদ্র স্বার্থে তা করছেন। প্রচারের লোভেই ওই ৩৩ জন প্রতিবাদ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
ইতিহাসে মোগল যুগ, জীববিদ্যায় বিবর্তনবাদ, রসায়নে পর্যায় সারণীর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শিক্ষামহলের সঙ্গে জড়িত বিশিষ্টেরা। সে সময় এনসিইআরটি-র তরফে পাঠ্যক্রমের বোঝা কমানোর যুক্তি দেওয়া হলেও তা মানতে চায়নি শিক্ষামহল। উল্টে এর মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে সঙ্ঘের নীতি মেনে গৈরিকীকরণের অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে নামে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই পাঠ্যক্রমে ওই বিষয়গুলি সরকার যে ফেরাবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রক এবং এনসিইআরটি।