প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
আগামী বছরের শুরুতে লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ে যাবে। তৃতীয় বার মোদী সরকার গড়তে বিজেপি অন্যতম লক্ষ্য গ্রামীণ ভারতে ভাল ফল করা। সেই কারণে এ বার রাজ্যগুলির পঞ্চায়েত পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। দলীয় সূত্রের খবর, নরেন্দ্র মোদী সরকারের উন্নয়নকে একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ওই বৈঠকের পরিকল্পনা। সেখানে পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। গ্রামীণ ভারতের মন বুঝতেই এই বৈঠকের আয়োজন।
সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তিনটি পৃথক জ়োনে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। পরবর্তী ধাপে দলীয় বার্তা একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন তিনি। দেশের তিনটি প্রান্তে ওই বৈঠক হওয়ার কথা। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির জন্য হরিয়ানা, পশ্চিম ও মধ্য ভারতের রাজ্যগুলির বৈঠক হবে গুজরাতে এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির জন্য পশ্চিমবঙ্গকে বেছে নেওয়া হয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দুষ্মন্ত গৌতম ও বিনয় সহস্রবুদ্ধের মতো নেতাদের।
বিজেপি সূত্রের মতে, প্রতিটি বৈঠকে অন্তত দেড়শো জন প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ, সেগুলির সুফল সম্পর্কে পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাতে ওই প্রতিনিধিরা গ্রামে গিয়ে মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্যের দিকগুলি তুলে ধরতে পারেন। এর মাধ্যমে আগামী দিনে দলের জনভত্তি গড়ে তুলতে তাঁরা সক্ষম হন। পাশাপাশি, আগত সদস্যদের নিজেদের এলাকায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ কেমন চলছে, সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলি, কী ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন— তা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনও তৈরি করে আনতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি, আজ লোকসভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বৈঠকে করেন নড্ডা। গত লোকসভায় অল্প ব্যবধানে হেরে যাওয়া প্রায় ১৬০টি আসনে এ বার জেতার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সে কারণে গত বছরের শেষ থেকেই ওই ১৬০টি লোকসভাকে চিহ্নিত করে সেখানে জনভিত্তি বাড়ানো, মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সেখানে বারংবার যাওয়া, রাত্রিযাপন করে স্থানীয়দের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে দল। সেই কাজের অগ্রগতি কতটা, তা খতিয়ে দেখতেই আজকের বৈঠকটি ডেকেছিলেন বিজেপি সভাপতি।
সূত্রের মতে, প্রতিটি লোকসভায় কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখে ওই ‘প্রবাস কর্মসূচি’ আগামী অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিহারে জেডিইউ আর বিজেপির সঙ্গে নেই। বৈঠকে গত লোকসভায় জেডিইউ-কে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলি নিয়ে বিজেপি কী ভাবে এগোবে তা নিয়েও আলোচনা হয়। মহারাষ্ট্রে সম্প্রতি রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে। ওই রাজ্যে বিরোধী শিবির ছেড়ে শাসক শিবিরে যোগ দিয়েছেন অজিত পওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি-এর একাংশ। ফলে ওই রাজ্যে নতুন যে রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে, তা নিয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
চলতি বছরের শেষে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, তেলঙ্গনা, মিজোরামে বিধানসভা নির্বাচন। ওই রাজ্যগুলির প্রস্তুতিও খতিয়ে দেখা হয় আজকের বৈঠকে।