পরিযায়ী শ্রমিক। ফাইল চিত্র।
অতিমারি কিংবা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ তো আছেই। তা ছাড়াও, সম্প্রতি একাধিক বার বিপন্ন পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে নাকাল হয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এই পরিস্থিতিতে দেশের পরিযান পদ্ধতিকে আরও নিখুঁত করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। মন্ত্রকের অফিসারেরা বলছেন, শুধু পরিযানের পদ্ধতি তৈরি করলেই হবে না। পরিযায়ী শ্রমিকেরা যাতে দালালদের খপ্পরে না-পড়েন সে দিকেও নজর রাখতে হবে। সে ব্যাপারে কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ‘এমিগ্রেশন’ অফিসগুলিও সক্রিয় হয়েছে। চালু করা হয়েছে ‘ই-মাইগ্রেট’ নামে একটি পোর্টালও।
বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকদের দাবি, প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা দালাল মারফত বিদেশে কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। ওই শ্রমিকদের অনেকের সম্পর্কেই সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা ভারতীয় দূতাবাসে কোনও তথ্য থাকে না। ফলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজও ব্যাহত হয়। কখনও কখনও ভিন্ দেশে ভুয়ো ভিসা কিংবা অপরাধ চক্রের খপ্পরেও পড়েন শ্রমিকেরা। সেই বিপদে দালালেরা দায়িত্ব নেন না। সম্প্রতি তাইল্যান্ডে কাজের টোপ দিয়ে মায়ানমারের একটি অপরাধ চক্রের হাতে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল কিছু ভারতীয় শ্রমিককে। শেষমেশ অবশ্য তাঁদের উদ্ধার করা গিয়েছে।
বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গ থেকেও রুটি-রুজির খোঁজে ভিন দেশে পাড়ি দেওয়া শ্রমিকের সংখ্যা কম নয়। মন্ত্রক সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ থেকে শ্রমিকদের একটি বড় অংশ আরব মুলুকের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও তাঁদের যাতায়াত রয়েছে। এর মধ্যে ড্রিল মেশিন অপারেটর, নির্মাণ শ্রমিক, গাড়িচালক, পাহারাদার এবং বাগান শ্রমিক বা খেতমজুরের কাজে বেশি লোক যান। এ ছাড়াও, অন্যান্য কাজেও বেশ কিছু শ্রমিক যান। তাই এ রাজ্যেও বিদেশ মন্ত্রকের ‘এমিগ্রেশন’ অফিস পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
মন্ত্রকের পরামর্শ, বিদেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি এজেন্ট আছেন। তাঁদের মাধ্যমে বিদেশে গেলে কোনও রকম বিপদে তাঁরা দায়বদ্ধ হন। এ ছাড়াও, ‘প্রবাসী ভারতীয় সহায়তা কেন্দ্র’ তৈরি করা হয়েছে। তার জন্য একটি টোল-ফ্রি নম্বর (১৮০০১১৩০৯০) চালু করা হয়েছে। সেখানে পরিযায়ী শ্রমিক বা তাঁর পরিবার যেমন সাহায্য পেতে পারেন, তেমনই যাঁরা বিদেশে কাজ খুঁজতে যেতে চান তাঁরাও সাহায্য পাবেন। এ ছাড়াও, বিভিন্ন আঞ্চলিক সেন্টার তৈরি করে বিদেশ যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র, বেতন ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মূলত কায়িক শ্রমনির্ভর কাজের জন্য যাঁরা বিদেশ যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেরই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভিন দেশের কায়দা-কানুন জানা থাকে না। ভাষাগত সমস্যাও থাকে। তাই এই শিবির খুব উপযোগী।’’