প্রতীকী ছবি।
সামনে গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন। আগামী বছর কর্নাটক, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোট। দেড় বছরের মধ্যেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। বেকারত্ব-মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চাপের মধ্যে ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে কর্মচারীরা জোরদার প্রতিবাদ করছেন।
এই প্রেক্ষাপটে মোদী সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ নিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়ার কথা ভাবছে। অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের মতে, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের সম্ভাবনা খুবই কম। ব্যাঙ্কের কর্মচারী সংগঠনগুলির বিরোধিতা রয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্ঘ পরিবারের অর্থনৈতিক ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের ‘সতর্কবার্তা’-ও মোদী সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে। অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু ভুললে চলবে না, সংসদের বাদল অধিবেশনের আগেই স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ জানিয়েছিল, ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের কুপ্রভাবের কথা মাথায় রাখতে হবে। তার পরে বাদল অধিবেশনে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিল পেশ করা হয়নি।”
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। গত অর্থ বছর কেটে গেলেও এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রক কোনও পদক্ষেপ করেনি। অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের ঘোষিত নীতি থেকে সরছে না। কিন্তু চলতি অর্থ বছরের ছয় মাস কেটে গেলেও সে বিষয়ে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। আগামী মাস থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হবে। সেখানেও ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ বিল পেশ হবে, এমন কথা নিশ্চিত ভাবে কেউ বলেননি। সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, মোদী সরকার দেশের সমস্ত সম্পত্তি বেচে দিচ্ছে বলে বিরোধীরা প্রচার করছেন।
তাই কেন্দ্র ধীরেসুস্থে এগোতে চাইছে।
গত বছর শীতকালীন অধিবেশনেও ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিল পেশ করা হবে বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, কর্মচারী সংগঠনগুলির প্রতিবাদে বিষয়টি রাজনৈতিক স্পর্শকাতর হয়ে উঠতে পারে মনে করে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের আগে ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। বিজেপির একাংশ নেতা মনে করছেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে আর ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের সম্ভাবনা কম। শীতকালীন অধিবেশনে বিল পেশ হলেও তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বা সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানোর কৌশল নেওয়া হবে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করবে। সংসদীয় কমিটির কাছে বিল এক বছর পড়ে থাকলে এমনিতেই ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ পিছিয়ে যাবে। মোদী সরকারের ঘোষিত নীতিও বজায় থাকবে। কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হবে না।
এই মুহূর্তে দেশে ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক রয়েছে। মোদী সরকারের বেসরকারিকরণের নীতি অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক ‘স্ট্র্যাটেজিক’ ক্ষেত্র। তাই সর্বাধিক চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক রেখে বাকিগুলি পুরোপুরি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিছু দিন আগে অর্থনীতিবিদ পুনম গুপ্ত ও নীতি আয়োগের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানাগাড়িয়া সওয়াল করেছেন, একমাত্র স্টেট ব্যাঙ্ক বাদ দিয়ে বাকি সব ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ করে ফেলা উচিত। উল্টো দিকে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বের মতে, সকলের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণে তাতে বাধা পড়তে পারে। বেসরকারিকরণ করতে গিয়ে দেশের ব্যাঙ্ক বিদেশি সংস্থার হাতে চলে গেলে অর্থনীতিতে তার কুফল ভুগতে হবে।
কী বলছে অর্থ মন্ত্রক?
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, সরকারের আপাতত লক্ষ্য আইডিবিআই ব্যাঙ্কের বিলগ্নিকরণ। তবে তা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকণের পর্যায়ে পড়ে না। কারণ আইডিবিআই ব্যাঙ্কের সিংহ ভাগ মালিকানা এই মূহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকার ও এলআইসি-র হাতে থাকলেও এ’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শ্রেণিতে পড়ে। কেন্দ্র ও এলআইসি-র হাত থেকে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের ৬০.৭২ শতাংশ মালিকানা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে, যা থেকে সরকারের ঘরে ২৯ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে। এর পরে কন্টেনার কর্পোরেশন, এয়ার ইন্ডিয়ার এখনও যে সব শাখা সংস্থা সরকারের হাতে রয়েছে, সেগুলির বেসরকারিকরণের চেষ্টা হবে।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক নয়, সামগ্রিক ভাবেই মোদী সরকারের বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণ শ্লথ গতিতে চলতে পারে। গত অর্থ বছরে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বিলগ্নিকরণের লক্ষ্য নেওয়া হলেও মাত্র ১৩,৫০০ কোটি টাকার লক্ষ্য পূরণ হয়েছিল। চলতি অর্থ বছরে ৬৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য নেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৪,৫০০ কোটি টাকা ঘরে এসেছে। আগামী অর্থ বছরে বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণ থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আরও কমানো হবে।