সতর্কতামূলক টিকাকরণ দেওয়া শুরু হল দেশে। ছবি: রয়টার্স।
গত বছরের শেষের দিক থেকে এ বছরের শুরু। মাত্র সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে যে হারে কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র।
বড়দিন, বর্ষশেষ এবং বর্ষবরণের বেলাগাম ভিড়ে সংক্রমণ যে মাত্রাছাড়া হতে পারে, সেই আশঙ্কা আগেই করেছিলেন চিকিৎসকদের একাংশ। এখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের দুশ্চিন্তা, লক্ষাধিক লোকের সমাগমের গঙ্গাসাগর মেলা এবং চার পুর নিগমের ভোট এই সংখ্যাকে কোন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। যদিও পর্যবেক্ষকদের মতে, এই একই রকম উদ্বেগ রয়েছে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ ভোটমুখী রাজ্য সম্পর্কেও।
১৭ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি— কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কলকাতায় এই তিন সপ্তাহে কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩০ গুণ। ১,৫৫৩ থেকে বেড়ে ৪৬,৭৫৩! সংক্রমণের চড়া হারে কেন্দ্রকে চিন্তায় রেখেছে আরও চার জেলা। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও পশ্চিম বর্ধমান। স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য, দেশে ওমিক্রনের দাপট সবে শুরু হয়েছে। শিখরে পৌঁছতে এখনও দেরি। তাতেই বঙ্গের এই পাঁচ-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় যে গতিতে করোনা ছড়াচ্ছে, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, সংক্রমণে দ্রুত রাশ টানতে না-পারলে বিষয়টি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
এমনিতে এখনও পর্যন্ত তৃতীয় ঢেউয়ে রাজ্য-সহ সারা দেশে অক্সিজেনের চাহিদা, হাসপাতালে ভর্তির অনুপাত ইত্যাদি দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু এক সঙ্গে আরও অনেক বেশি জন সংক্রমিত হলে, এই ছবি বদলে যেতে বেশি সময় লাগবে না বলেও আশঙ্কা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে দিল্লি, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কার্যত ফেল করে গিয়েছিল। তেমনই এখন আরও বেশি সতর্ক না হলে, পশ্চিমবঙ্গেও সেই পরিস্থিতি হতে পারে।
স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের যে পরিসংখ্যান কেন্দ্রের কাছে এসে পৌঁছেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। কারণ, দেখা যাচ্ছে কলকাতা মহানগরীর চৌহদ্দি ছাড়িয়ে কার্যত তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই সংক্রমণ বাড়ছে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়ার মতো সংলগ্ন জেলাগুলিতে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জেলাপিছু গড়ে অন্তত ৫-৭ শতাংশ সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ বাড়ছে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, উত্তর দিনাজপুরে।
এই অল্প সময়ের ব্যবধানে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা পৌনে ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে আবার গঙ্গাসাগর মেলা ছাড়পত্র পাওয়ায় ওই জেলায় সংক্রমণ পরিস্থিতি আগামী দিনে ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলেই আশঙ্কা স্বাস্থ্যকর্তাদের। বর্তমানে দেশে ৯১টি জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি। ওই তালিকায় শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের ১৫টি জেলা রয়েছে কেন্দ্রের ওই উদ্বেগজনক এলাকার তালিকায়।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংক্রমণ ঠেকানোর উপায় খুঁজতে তাই ফের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া। আজ পশ্চিম ও মধ্য ভারতের ছ’টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। আগামী এক-দু’দিনের মধ্যে দেশের বাকি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রক। এ দিনের বৈঠকে তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি দ্রুততার সঙ্গে সেরে রাখার উপরে জোর দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এরই মধ্যে এ দিন থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের সতর্কতামূলক টিকাকরণ। ওই বুস্টার ডোজ় পাচ্ছেন কো-মর্বিডিটিতে আক্রান্ত ষাটোর্ধ্বরাও। দীর্ঘদিন ধরেই এঁদের সকলকে বুস্টার ডোজ় দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। দেশে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আর দেরি না করে নতুন বছরের শুরুতেই বুস্টার ডোজ় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রায় ৫.৭৫ কোটি জনকে ওই সতর্কতামূলক ডোজ় দেওয়া হবে। এর মধ্যে এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মী, দু’কোটি ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার ও ২.৭৫ কোটি বয়স্ক নাগরিক, যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে কোনও রোগের শিকার বা কো-মরবিড। আজ সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ জন এই সতর্কতামূলক টিকা নিয়েছেন।স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কো-উইন ব্যবস্থায় আগাম নাম লেখানোর পাশাপাশি কোনও ব্যক্তি সরাসরি টিকা কেন্দ্রেও গিয়েও প্রতিষেধক নিতে পারবেন। দ্বিতীয় টিকা পাওয়ার পরে ৯ মাস কেটে গেলেই এই সতর্কতামূলক টিকা-ডোজ় নেওয়া যাবে।