— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সাইবার অপরাধ এবং ডিজিটাল গ্রেফতারির মতো জালিয়াতির ঘটনা রুখতে ফের পদক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১,৭০০টিরও বেশি স্কাইপ এবং ৫৯,০০০ হোয়াট্সঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে বন্ধ করিয়ে দিয়েছে ভারতীয় সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (আইফোরসি)। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বান্দি সঞ্জয় কুমার মঙ্গলবার লোকসভায় এই পরিসংখ্যান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সঞ্জয় লোকসভায় বলেন, ‘‘আইফোরসি-র অধীনে গত ২০২১ সালে ‘সিটিজ়েন ফিন্যান্সিয়াল ফ্রড রিপোর্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি নয়া প্রকল্প চালু হয়। এর পর থেকে যে কোনও ধরনের আর্থিক জালিয়াতির ঘটনায় তৎক্ষণাৎ অভিযোগ দায়ের করাও অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ লক্ষ ৯৪ হাজার অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৩,৪৩১ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।’’ এর পরেই সঞ্জয় জানান, সাধারণত যে অ্যাকাউন্টগুলি থেকে এই ধরনের সাইবার প্রতারণার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে, তার বেশ কয়েকটি চিহ্নিত করে ‘ব্লক’ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। চলতি বছরে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৬ লক্ষ ৬৯ হাজার সিমকার্ডও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরেই ডিজিটাল গ্রেফতারির একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। একের পর এক সাইবার প্রতারণা ঠেকাতে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এর আগেও প্রায় ১৭ হাজার অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে ব্লক করেছে কেন্দ্র। অভিযোগ, ওই অ্যাকাউন্টগুলির বেশির ভাগই লাওস, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের। এ ছাড়া, ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় দেশীয় সাইবার জালিয়াতদের একটি তালিকাও তৈরি করেছে কেন্দ্র। সন্দেহভাজন কোনও ব্যক্তির ফোন পেলে যে কোনও সময় সাধারণ নাগরিকেরা নির্দিষ্ট পোর্টালে গিয়ে তালিকায় ওই ব্যক্তির নাম রয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখতে পারবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিন নিত্যনতুন ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। কেন্দ্রীয় সরকারের সাইবার অপরাধ নথিভুক্তির পোর্টাল (এনসিআরপি)-র তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ৭ লাখ ৪০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১২০ কোটি ৩০ লাখ টাকার ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ হয়েছে। এ ছাড়া, লগ্নির টোপ দিয়ে প্রতারণা হয়েছে ২২২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। ২০২৩ সালে গোটা বছরে সাড়ে ১৫ লাখেরও বেশি সাইবার জালিয়াতির অভিযোগ জমা পড়েছিল। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন। কারও সঙ্গে ডিজিটাল গ্রেফতারির মতো ঘটনা ঘটলে অযথা ভয় না পেয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে ফোন কলটি রেকর্ড করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্ভব হলে ‘স্ক্রিন রেকর্ড’ করার কথাও বলেছেন। পাশাপাশি, যখনই এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটবে, তা ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইনে ফোন করে জানাতে হবে। হেল্পলাইন নম্বরটি হল ১৯৩০। পাশাপাশি, অভিযোগ দায়ের করতে হবে স্থানীয় থানাতেও।