এখনও দেশের প্রায় ২০-২২ কোটি মানুষ কোভিড টিকার প্রথম ডোজ়ই পাননি। ফাইল চিত্র।
লক্ষ্য ছোঁয়া অসম্ভব। পরিকল্পনা ছিল, দেশে দুই ডোজ় টিকাকরণ সেরে ফেলা হবে ডিসেম্বরে। কিন্তু এখনও দেশের প্রায় ২০-২২ কোটি মানুষ কোভিড টিকার প্রথম ডোজ়ই পাননি। তাই বদলে ফেলা হল সময়সীমা। আপাতত নভেম্বরের মধ্যে প্রথম ডোজ় টিকাকরণ শেষ করতে আজ রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সক্রিয় হতে বললেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া। দ্বিতীয় ডোজ় কত দিনে সকলকে দেওয়া যাবে ,তার কোনও দিশা মেলেনি এই বৈঠক থেকে।
টিকাকরণের গতি বাড়াতে আজ রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মাণ্ডবিয়া। প্রথম ডোজ়ের টিকাকরণে জাতীয় গড়ের চেয়ে পিছিয়ে থাকা পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো ১০টি রাজ্যকে টিকা দেওয়ার গতি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের অবশ্য দাবি, দেশের অনেক বড় রাজ্যের তুলনায় টিকাকরণে বাংলার পরিস্থিতি ভাল। সময়ে প্রতিষেধক না পাওয়া, উৎসবের মরসুম, বন্যার মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও রাজ্যের বড় সংখ্যক মানুষ প্রথম ডোজ় টিকা পেয়ে গিয়েছেন। পিছিয়ে নেই দ্বিতীয় ডোজ়ের ক্ষেত্রেও। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গে সফরে থাকায় পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হিসাবে এ দিনের বৈঠকে যোগ দেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা সৌমিত্র মোহন। যদিও তিনি বৈঠকে কিছু বলার সুযোগ পাননি।
প্রথম ডোজ় টিকাকরণের জাতীয় গড় এখন ৭৭%। বর্তমানে যে রাজ্যগুলি প্রথম ডোজ়ের ক্ষেত্রে জাতীয় গড়ের পিছনে রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (৭৪%)। যদিও রাজ্য প্রশাসনের হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ৮০% মানুষ প্রথম ডোজ়ের টিকা পেয়ে গিয়েছেন।
কেন্দ্র ও রাজ্যের হিসেবে এই ফারাকের জন্য মূলত কো-উইন অ্যাপ্লিকেশনকে দায়ী করেছে পশ্চিমবঙ্গের মতো একাধিক রাজ্য। তাদের বক্তব্য, টিকাদানের তথ্য তৎকাল তথা ‘রিয়েল টাইম’-এ আপডেট হচ্ছে না। সূত্রের মতে, বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও আজ বৈঠকে বলেন, রাজ্যের হাতে থাকা টিকার সংখ্যা ও যে সংখ্যক রাজ্যবাসীর টিকা নেওয়া বাকি রয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে, তার সঙ্গে উত্তরাখণ্ড সরকারের পরিসংখ্যানের বিস্তর ফারাক রয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যের এই বক্তব্যে অস্বস্তিতে পড়ে যায় কেন্দ্র। তবে পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গই যে শুধু প্রথম ডোজ়ে জাতীয় গড় থেকে পিছিয়ে রয়েছে, তা নয়। উত্তরপ্রদেশেও প্রথম ডোজ় পেয়েছেন মাত্র ৬৬%। বিহারেও প্রথম ডোজ় পাওয়া মানুষের ভাগ এক। সেই রাজ্যে সরকারের প্রধান শরিক হল বিজেপি। নবান্নের যুক্তি, ছোট রাজ্যে জনসংখ্যা কম হওয়ায় সেগুলি তালিকার উপরে স্থান পেয়েছে। তুলনায় দশ কোটি জনসংখ্যার পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য বড় রাজ্য থেকে অনেক দ্রুত টিকাকরণ চালাচ্ছে।
দ্বিতীয় ডোজ়ের ক্ষেত্রে সার্বিক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। অধিকাংশ উন্নত দেশ যখন তাদের মোট জনসংখ্যাকে দ্বিতীয় ডোজ়ের টিকা দিয়ে ফেলেছে, সেখানে বিস্তর পিছিয়ে ভারত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৯৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে মাত্র ৩৩% ব্যক্তি কেবল দ্বিতীয় টিকা পেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন ২৮% ।
সূত্রের মতে, রাজ্যের হাতে যথেষ্ট টিকা থাকা সত্ত্বেও তা সময়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মাণ্ডবিয়া। আজ কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের কাছে ৩০ লক্ষ ডোজ় কোভিশিল্ড ও প্রায় ৭ লক্ষ ডোজ় কোভ্যাক্সিন অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৩৭ লক্ষ ডোজ় টিকা পড়ে রয়েছে। এই যুক্তি মানতে নারাজ রাজ্য। নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, গত কাল কলকাতায় ২৫ লক্ষ ডোজ় টিকা এসে পৌঁছেছে। আর আজ সেটিকে পরিসংখ্যানে জুড়ে দেখানো হয়েছে। রাজ্যের দাবি, গোড়া থেকেই টিকার সমস্যায় ভুগছে পশ্চিমবঙ্গ। কখনও টিকা আসে তো সিরিঞ্জ আসে না। কখনও সিরিঞ্জ এসে পড়ে থাকে, কিন্তু টিকা পৌঁছয় না। অথচ কেন্দ্র পরিসংখ্যান দেখিয়েই দায় সারছে। রাজ্যের দাবি, তা সত্ত্বেও বন্যা, উৎসবের মরসুমের মধ্যেও টিকা দেওয়ার প্রশ্নে ভাল সাফল্য পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সূত্রের মতে, সময়ে টিকা না পাওয়া নিয়ে বৈঠকে ক্ষোভ জানায় কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান। অসন্তোষ জানায় বিহারও।
দ্বিতীয় দফার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির দিকে কেন্দ্র আঙুল তুললেও পরোক্ষে কেন্দ্রীয় নীতিকেই দুষছেন অনেক রাজ্য। রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘টিকা দেওয়ার প্রশ্নে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোভিশিল্ড হাতে পাচ্ছি আমরা। প্রথমটির পরে যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য ৩-৪ মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যার প্রভাবে দেরি হচ্ছে দ্বিতীয় দফার টিকাকরণ। কেন্দ্রকে সেই সমস্যাও বুঝতে হবে।’’