রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব নাম না-করে তীব্র কটাক্ষ হানলেন রেলমন্ত্রীর পদে তাঁর পূর্বসূরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ছবি: পিটিআই।
পেশা রাজনীতি হোক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্ব অথবা অন্য কিছু, বিশেষত কোনও প্রকাশ্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে পূর্বসূরির নিন্দেমন্দ করাটা শিষ্টাচারসম্মত নয় বলেই প্রাজ্ঞজনের অভিমত। বৃহস্পতিবার দেখা গেল, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিজের ও নিজেদের সরকারের আপেক্ষিক উৎকর্ষের দাবি জানিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব নাম না-করে তীব্র কটাক্ষ হানলেন রেলমন্ত্রীর পদে তাঁর পূর্বসূরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পুরীর সঙ্গে বাংলা ও বাঙালির আবেগ ও আনন্দের আবহমান সম্পর্ক এই অতিদ্রুতগামী ট্রেনের সূত্রে গভীরতর হবে, এমন আবহ ঘনিয়ে ওঠার মুখে রেলমন্ত্রীর মন্তব্যে তাল গেল কেটে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুরী থেকে হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা করার পরে রেলমন্ত্রী পুরী থেকে হাওড়া পর্যন্ত ওই ট্রেনে সফর করেন। সংবাদমাধ্যমের একটি প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০১০-১১ সালে কে রেলমন্ত্রী ছিলেন, আপনারা জানেন। তখন রেলের বাজেট ছিল ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এখন তা গিয়ে পৌঁছেছে দু’লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকায়।’’
রেল শিবির-সহ বিভিন্ন মহলের প্রাক্তন ও বর্তমান অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, সরকার আসে, সরকার যায়। কোনও সরকার রেল বা অন্য কোনও ক্ষেত্রকে পূর্ববর্তী সরকারের থেকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যেতেই পারে। কিন্তু বর্তমান রেলমন্ত্রী এ দিন যে-ভাবে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতাকে আক্রমণের লক্ষ্য করেছেন, তা সুধী-সমাজে সুলভ নয়। কলকাতার মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধন প্রসঙ্গে অশ্বিনী এ দিন বলেন, ‘‘আগে শুধু শিলান্যাস আর উদ্বোধন হত। কেবল অনুষ্ঠান করেই ক্ষান্ত থাকতেন (মমতা)। তার পরে প্রকল্পের কী হল, তার কোনও পরোয়া করতেন না। এখন প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ হতে দেখছেন। গঙ্গার নীচে মেট্রোর কাজ এগিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে।’’
পুরী থেকে হাওড়া বন্দে ভারতের উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এ দিন দিল্লি থেকে ভিডিয়োর মাধ্যমে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার রেল প্রকল্পের সূচনা করেন। গুরুত্বের সঙ্গে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রেল প্রকল্প রূপায়ণের কথা বলেন তিনি। রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব নিজেদের তৎপরতার ব্যাখ্যান করতে গিয়ে জানান, প্রতি আট থেকে ন’দিনে একটি করে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস তৈরি হচ্ছে। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তকে ওই ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। এ রাজ্যে নিউ জলপাইগুড়ি-গুয়াহাটি এবং অন্য রুটে বন্দে ভারত চালুর বিষয়ে জল্পনা থাকলেও এ দিন ওই সব ট্রেন চালু করার দিনক্ষণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি রেলমন্ত্রী। নিউ গড়িয়া-রুবি মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধনের তারিখ সম্পর্কেও নীরব ছিলেন তিনি। যদিও তিনি জানান, ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে সক্ষম, এমন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের নকশা তৈরির কাজ চলছে। আগামী দু’বছরের মধ্যেই ওই ট্রেন চালু হবে বলে রেল সূত্রের খবর।
হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাল, শনিবার থেকে যাত্রী নিয়ে ছুটবে। মাত্র সাড়ে ছ’ঘণ্টায় পুরী পৌঁছবে ওই ট্রেন। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এ দিন পুরী থেকে ছেড়ে যে-সব স্টেশনে থেমেছে, সর্বত্রই নতুন ট্রেনকে অভ্যর্থনা জানানোর বিপুল আয়োজন ছিল।