জিতন রাম মানঝির ইফতার পার্টিতে (বাঁ দিক থেকে) সুশীল মোদী, নীতীশ কুমার ও রামবিলাস পাসোয়ান। ছবি: পিটিআই
ইফতার পার্টি নিয়ে কটাক্ষ করে এ বার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি অমিত শাহের কাছে তিরস্কৃত হলেন গিরিরাজ সিংহ। ভবিষ্যতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তাঁকে ডেকে সতর্ক করে দিলেন শাহ।
ঠোঁটকাটা বলে গিরিরাজের ‘সুখ্যাতি’ বরাবরের। সোজা কথা কোনও রাখঢাক না রেখেই তিনি বলে দেন অকপটে। এমনকি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরও যে তাঁর সেই স্বভাব পাল্টায়নি, সম্প্রতি আরও এক বার তা প্রমাণ করেন বিহারের বেগুসরাইয়ের সাংসদ গিরিরাজ সিংহ। তাও আবার এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি, যাতে বিতর্কের যথেষ্ট রসদ মজুত। সোমবার পটনায় ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন বিহারের শাসক-বিরোধী প্রায় সব দলের নেতারা। সেই ছবি টুইটারে শেয়ার করে গিরিরাজের মন্তব্য, পুরোটাই ‘দেখনদারি’।
পটনায় ইফতারের আয়োজন করেছিলেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ইউপিএ জোটের শরিক জিতনরাম মানঝি। হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা সুপ্রিমোর আমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন বিহার তথা কেন্দ্রের শাসক জোট এনডিএর নেতানেত্রীরা। হাজির ছিলেন জেডিইউ সুপ্রিমো তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা সুশীল মোদী, এলজেপি সুপ্রিমো রামবিলাস পাসোয়ান এবং তাঁর ছেলে চিরাগ-সহ শাসক-বিরোধী শিবিরের শীর্ষ নেতানেত্রীরা। সেই অনুষ্ঠানে নিজে যাননি গিরিরাজ। কিন্তু অনুষ্ঠানের ছবি শেয়ার করে শুধু বিরোধী নয়, নিজের দলের নেতাদেরও ফেলে দিয়েছেন অস্বস্তিতে।
ঠিক কী বলেছেন মোদী-২ সরকারের পশুপালন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ? সোমবারের ওই ইফতার পার্টির একাধিক ছবি মঙ্গলবার টুইটারে শেয়ার করেন গিরিরাজ। তার সঙ্গে হিন্দিতে লেখেন, ‘‘এই ছবিগুলো কত সুন্দর হত, যদি নবরাত্রির ভোজও সমান আতিথেয়তা ও আগ্রহের সঙ্গে আয়োজন করা হত। নিজেদের বিশ্বাসকে বলতে এত ইতস্তত করি এবং ভণিতার আশ্রয় নিই?’’
আরও পড়ুন: সিঙ্গুরের পথে গজলডোবা? মমতার স্বপ্ন প্রকল্পের জমি ঘিরে আন্দোলন কৃষকদের, পিছনে বিজেপি
ছবিগুলিতে সবাইকেই দেখা যাচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের পরিচিত সাদা পাঞ্জাবী, সাদা টুপি পরিহিত অবস্থায়। খোশমেজাজে সময় কাটানোর মুহূর্ত ধরা পড়েছে ছবিগুলিতে।
টুইটারে এই ছবি এবং মন্তব্য পোস্ট হতেই বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। অমিত শাহ তাঁকে ভর্ৎসনা করেন-ই, সেই সঙ্গে শরিকদেরও তোপের মুকে পড়েন গিরিরাজ। জেডিইউ-এর মুখপাত্র সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘উনি এই ধরনের মন্তব্য করতেই অভ্যস্ত। ওঁর মানসিক চিকিৎসা করানো দরকার।’’ অন্য শরিক এলজেপির সংসদীয় দলনেতা চিরাগ পাসোয়ানের কটাক্ষ, ‘‘সবাই জানেন গিরিরাজজি কেমন মানুষ। ওঁকে বলতে চাই, নবরাত্রি হোক বা রমজান, আমরা সমস্ত উৎসবই পালন করি।’’
আরও পড়ুন: মেয়াদ শেষ করতে পারবে না তৃণমূল সরকার, বিদ্রোহের পথে একঝাঁক বিধায়ক, দাবি বিজয়বর্গীয়র
বিতর্কিত মন্তব্য করতে সিদ্ধহস্ত গিরিরাজের জয় নিয়ে এ বার রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। বেগুসরাই কেন্দ্রে বহিরাগত গিরিরাজের বিরুদ্ধে ছিলেন হেভিওয়েট বাম প্রার্থী কানহাইয়া কুমার। কিন্তু তার পরেও ৪ লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতে সাংসদ হয়ে মন্ত্রিত্বও পেয়েছেন গিরিরাজ।
লোকসভা ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি তথা এনডিএ জোট। মন্ত্রিসভা গঠনে তাঁদের ফর্মুলা ছিল, শরিক দলগুলির প্রতীকী উপস্থিতি। অর্থাৎ প্রতিটি দল থেকে এক জন করে মন্ত্রী হবেন। কিন্তু নীতীশের প্রস্তাব ছিল, সাংসদের আনুপাতিক হারে মন্ত্রী করা হোক। নিজের দল জেডিইউ-এর জন্য দু’জন মন্ত্রীর দাবি করলেও এনডিএ তা মানেনি। ফলে নীতীশ কিছুটা ক্ষুব্ধ। তা নিয়ে বিজেপি-জেডিইউ-এর মধ্যে টানাপড়েন চলছিলই। গিরিরাজের এই কটাক্ষের জেরে সেই সম্পর্কের ‘তিক্ততা’ আরও বাড়তে পারে বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।