পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে এখনও প্রায় কুড়ি শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ় পাননি। ফাইল চিত্র।
রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাস, মেট্রো স্টেশন-সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও জনাকীর্ণ এলাকাগুলিতে টিকাকরণ কেন্দ্র খোলার জন্য রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিল কেন্দ্র। পাশাপাশি, আজ একটি আলোচনাচক্রে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া জানিয়ে দেন, স্কুল-কলেজ খুলে গেলেও ছোটদের টিকা বাজারে আনা নিয়ে সরকার কোনও তাড়াহুড়ো করবে না।
দেশের ৯৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ককে নভেম্বর মাসের মধ্যে কোভিডের টিকার অন্তত একটি ডোজ় দেওয়ার পরিবর্তিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু আজ রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে এখনও প্রায় কুড়ি শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ় পাননি। তাঁদের দ্রুত টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসার জন্য রাজ্যগুলিকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে অনুরোধ করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। টিকাকরণের হার বাড়াতে চলতি মাসেই ‘হর ঘর দস্তক’ কর্মসূচি শুরু করেছে কেন্দ্র, যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সবাই টিকা নিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখবেন। যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের বুঝিয়ে টিকাকেন্দ্রে পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের।
এরই সঙ্গে এ বার বড় শহরের ব্যস্ত মোড়ে, গুরুত্বপূর্ণ রেল ও মেট্রো স্টেশনগুলিতে এবং বাস টার্মিনাসে টিকাকরণ কেন্দ্র খোলার জন্য রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, সাধারণত ট্রেন ও বাসের মাধ্যমেই দূরের মানুষেরা বড় শহরে আসেন। তাঁদের জন্য স্টেশন ও বাস টার্মিনাসে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি রাজ্যগুলিকে জনাকীর্ণ এলাকায় ‘রোকো অওর টোকো’ অর্থাৎ ‘দাঁড় করাও আর প্রশ্ন করো’ কর্মসূচি চালু করতে বলা হয়েছে। এতে যাঁরা টিকা পাননি, তাঁদের চিহ্নিত করে টিকা নিতে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের যে ৪৫টি জেলায় টিকাকরণের হার পঞ্চাশ শতাংশের কম, সেখানে মানুষের মধ্যে টিকা নিতে অনীহার কারণ চিহ্নিত করে জেলাভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরির জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
চলতি মাসের মধ্যে দেশের সব পূর্ণবয়স্ককে টিকাকরণের প্রথম ডোজ়ের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নেওয়া হলেও তা বাস্তবে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রের বৈঠকে। মাণ্ডবিয়া বলেন, প্রায় ১২ কোটি দেশবাসী সময় পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও দ্বিতীয় ডোজ় নেননি। রাজ্যগুলিকে সেই দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিদিন প্রায় এক কোটির বেশি টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন একাধিক রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে প্রতিষেধক সময়ে না পাওয়া নিয়ে আজ ফের সরব হয় বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি। যদিও মাণ্ডবিয়ার দাবি, কেন্দ্রের কাছে যথেষ্ট প্রতিষেধক রয়েছে। রাজ্যগুলির দাবি মতো তাদের তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
দেশের পূর্ণবয়স্ক জনসংখ্যারই টিকাকরণ যেখানে সম্পূর্ণ করা যায়নি, সেখানে দু’টি ডোজ়ের পরে ফের বুস্টার ডোজ় দেওয়ার সুপারিশ করে বিতর্ক বাধিয়েছেন কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের নির্মাতা ভারত বায়োটেকের প্রধান কৃষ্ণ এলা। তাঁর দাবি, দু’টি ডোজ় দেওয়ার ছ’মাস পরে বুস্টার ডোজ় দেওয়া উচিত। যদিও পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের একাংশ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কাছে বুস্টার ডোজ় দেওয়ার দাবি তুলেছেন। ওই চিকিৎসকদের যুক্তি, যাঁরা টিকাকরণ কর্মসূচির একেবারে গোড়ায় টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের সবার আগে বুস্টার ডোজ় পাওয়া উচিত। কিন্তু সাকুল্যে দেশের ৩৪ শতাংশ মানুষ যেখানে দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন, সেখানে বুস্টার ডোজ় আদৌ দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই।