Loans

Indian Economy: অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঋণে ঢালাও গ্যারান্টি কেন্দ্রের, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

কোভিডে বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দরিদ্র মানুষের হাতে নগদ জোগানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদদের অনেকে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৫
Share:

সরকারের সিদ্ধান্তে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ফাইল চিত্র

কোভিড আর লকডাউনের ধাক্কায় খাদে গড়িয়ে পড়া অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ঋণ বিলিতেই জোর দিয়েছে মোদী সরকার। শুধু তা-ই নয়, ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প, ব্যবসা এবং করোনা বিধ্বস্ত ক্ষেত্রগুলিতে জোগানো ঋণে ‘গ্যারান্টর’ তারাই। কিন্তু ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের মুখে এই ঋণ গ্যারান্টি প্রকল্পই কেন্দ্রের ঘুম কেড়ে নিতে পারে বলে শঙ্কিত অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, এই ‘লুকোনো’ ধারের বোঝা দু’তিন বছর পরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক তথা কেন্দ্রীয় সরকারের গলার ফাঁস হয়ে উঠতে পারে। যদিও তা মানতে নারাজ কেন্দ্রের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যন।

Advertisement

গত বছর কোভিডের প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়ার পরেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ৩ লক্ষ কোটি টাকার সহজ ঋণের প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। এর মধ্যে ২.৭ লক্ষ কোটি টাকার সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ ইতিমধ্যেই বিলি হয়ে গিয়েছে। এর পরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে হোঁচট খাওয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য সোমবার আরও ১.১ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ-গ্যারান্টি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আগের প্রকল্পের বহরও বাড়িয়ে ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা করেছেন নির্মলা। ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার মাধ্যমেও এই গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ বিলি হবে।

এই ঋণ-গ্যারান্টি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য কোভিড ও লকডাউনের জেরে ধুঁকতে থাকা শিল্প, ব্যবসাকে ফের কাজ-কারবার চালুর জন্য ধার জোগাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। কিন্তু ঋণগ্রহীতারা শোধ না-দিলে, ধারের টাকা শোধ করে দেবে কেন্দ্রই। আশঙ্কার শিকড় সেখানে। বিশেষত যেখানে ধারের বড় অংশ বন্ধকহীন।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “আমরা জানি, এই সমস্ত ঋণের একটা বড় অংশ শোধ হবে না। তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। ফলে দু’তিন বছরের মধ্যে যখন ঋণ শোধের সময় আসবে, তখন এক ধাক্কায় ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ি ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। আর ধার শোধের দায় নিতে গিয়ে রাজকোষের উপরেও চাপ বাড়বে।” তাঁর মতে, আপাতত এই ঋণ কার্পেটের নীচে ধামাচাপা দেওয়া থাকছে ঠিকই। কিন্তু আগামী দিনে তা মাথাব্যথার কারণ হবে।

গত সপ্তাহেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে এই লুকোনো ঋণ নিয়ে সতর্ক করেছে। তাদের মতে, এই ঋণ আর্থিক সঙ্কটের কারণ হতে পারে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টও বলছে, ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ ও অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) ফের মাথাচাড়া দিতে পারে।

‘লুকোনো ঋণ’-এর সমস্যা মানছেন সুব্রহ্মণ্যনও। তাঁর মতে, এখন যে ঋণ বিলি হচ্ছে, তা দু’তিন বছর পরে অনেকেই হয়তো শোধ করতে পারবেন না। ফলে তা সরকারকে শোধ করতে হবে। তবে সেই কারণেই একে খানিকটা নগদ বিলির তকমা দিচ্ছেন তিনি।

কোভিডে বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দরিদ্র মানুষের হাতে নগদ জোগানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদদের অনেকে। বলেছিলেন, ছোট শিল্পকে কম খরচে পুঁজি জোগানোর কথাও। সুব্রহ্মণ্যনের মতে, এটা খানিকটা সেই নগদ বিলিই। কারণ যাঁরা ঋণ শোধ করতে পারবেন না, তাঁদের হয়ে তা করবে কেন্দ্র।

তবে উপদেষ্টার দাবি, এই ঋণ সঙ্কটের কারণ হবে না। তাঁর যুক্তি, সমস্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মনে করছে, আগামী অর্থবর্ষ থেকেই ভারতে বৃদ্ধির হার বাড়বে। তাতে সবাই লাভবান হবেন। ফলে তখন অনেকেই ঋণ শোধ করার মতো ভাল অবস্থায় থাকবেন বলে তিনি আশাবাদী। সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, ঋণ শোধ না-হওয়ার ঝুঁকি সামাল দেওয়ার মতো পুঁজি ব্যাঙ্কগুলির হাতে যথেষ্ট। প্রতি এক টাকা অনাদায়ি ঋণের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের খাতায় ৮৮ পয়সা তুলে রাখা থাকে। দু’তিন বছর পরে বৃদ্ধির সুবাদে রাজকোষের অবস্থাও ভাল থাকবে বলে তাঁর ধারণা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement