ফাইল চিত্র।
ঋণের বোঝা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে সেই ঋণের উপরে গুনতে হওয়া সুদের বোঝাও। তা সত্ত্বেও কোভিড-বিধ্বস্ত অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে এখনই রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানা বা ঘাটতি পূরণে ধারের অঙ্ক কমিয়ে ফেলা সম্ভব নয় বলেই মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রক মনে করছে।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে বাজেট পেশ করবেন। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের মতে, কোভিড অতিমারি, লকডাউন এবং ওই জাতীয় নানা বিধিনিষেধের জেরে এক দিকে সরকারের আয় কমে যাবে। আবার অন্য দিকে, কোভিড মোকাবিলা-সহ স্বাস্থ্য খাতে খরচ বেড়ে যাবে ধরে নিয়ে চলতি আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতি ৬.৮ শতাংশে পৌঁছে যাবে বলে গত বছরের বাজেটেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। ঘাটতির এই মাত্রা যথেষ্ট হলেও, এখনই তাতে খুব বেশি রাশ টানা কঠিন। কারণ ঘাটতি কমানোর জন্য খরচ ছাঁটাই করতে গেলে, তাতে আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খাবে।
বৃদ্ধি ও ঘাটতির মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলার এই কঠিন সময়ে সরকারের ঘাড়ে ঋণের বোঝার পরিমাণ দিন-দিন চেপে বসছে। ফলে ঋণের উপরে সুদের বোঝাও বাড়ছে। বাম জমানার পরে ক্ষমতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ঘাড়ে ঋণ ও সুদের বোঝা নিয়ে অনুযোগ করতেন। এখন কেন্দ্রীয় সরকারেরও কার্যত সেই অবস্থা। গত অর্থবর্ষ, ২০২০-২১ সালে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল দেশের জিডিপি-র ৮৭.৮ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, চলতি আর্থিক বছরে তা সামান্য কমলেও ৮৭ শতাংশর উপরেই থাকবে। জিডিপি-র তুলনায় ঋণের অনুপাত সামান্য কমার কারণ অবশ্য ঋণের অঙ্ক হ্রাস নয়। গত বছরের তুলনায় জিডিপি-র বহর বৃদ্ধি।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের চিন্তার কারণ হল, ঋণের বহর বাড়ায় তার উপরে সুদের বোঝাও বেড়েছে। গত আর্থিক বছরে সরকারের ১০০ টাকা রাজস্বের মধ্যে ৪৪.৬০ টাকাই সুদ মেটাতে বেরিয়ে গিয়েছে। আগামী অর্থবর্ষে ১০০ টাকা রাজস্ব আদায় হলে, অন্তত ৪৫ টাকা সুদ মেটাতে খরচ হয়ে যাবে। ফলে বেতন-পেনশন মিটিয়ে পরিকাঠামোয় খরচ করতে গিয়ে সরকারকে নতুন করে ধার নিতে হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারই বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিলে, বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য ধার নেওয়ার সুযোগ কমে যায়। ঋণে সুদের হারও বাড়ে। এখন বিনিয়োগকারীরা তেমন লগ্নি করছেন না বলে সেই অসুবিধা তেমন টের পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু জিডিপি-র তুলনায় ঋণের বহর এত বেশি বলে আর্থিক মূল্যায়নকারী সংস্থাগুলি ভারতের সম্পর্কে নেতিবাচক মূল্যায়ন প্রকাশ করে চলছে। এটি চিন্তার বিষয়।’’
সরকারকে ঋণ নিতে হয় আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ফারাক বা রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে। চলতি আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬.৮ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, আগামী অর্থবর্ষে ঘাটতি সামান্য কমিয়ে ৬ থেকে ৬.৩ শতাংশের মধ্যেই বেঁধে রাখার লক্ষ্য স্থির করা হতে পারে। কারণ, এখন ঘাটতি কমানোর থেকেও সরকারের অগ্রাধিকার, পরিকাঠামোয় বেশি খরচ করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। অর্থনীতিবিদদের এক বড় অংশও মনে করছেন, আগামী বছরে হয়তো চলতি বছরের তুলনায় কর বাবদ আয়, বিলগ্নিকরণ থেকে আয় বেশি হবে। কিন্তু তেমনই পরিকাঠামো, একশো দিনের কাজেও বেশি খরচ করতে হবে। ফলে ঘাটতিতে খুব বেশি রাশ টানা মুশকিল। চলতি আর্থিক বছরের মতোই সরকারকে আগামী অর্থবর্ষেও ১২ থেকে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘এই পরিস্থিতিতে একমাত্র জিডিপি বাড়লে, তবেই তার তুলনায় ঋণের বোঝার অনুপাত কমবে।’’