ফাইল চিত্র।
কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রেখে কীভাবে সুস্থ থাকা যাবে, তা জানতে কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত মন্ত্রক, দফতর থেকে পাঁচ জন করে কর্মী প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন। দু’দিনের প্রশিক্ষণের জন্য মাথা পিছু খরচ পড়বে ২২ হাজার টাকা। সঙ্গে গুণতে হবে জিএসটি-ও। এই খরচ জোগাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। অর্থাৎ এ জন্য প্রতিটি দফতরের অন্তত এক লক্ষ টাকা করে খরচ হবে।
আগামী শুক্র ও শনিবার দিল্লিতে ‘নবজীবন’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ‘জাতীয় আয়ুষ সম্মেলন-২০২২’-এর আয়োজন করেছে। এই সংগঠনের সঙ্গে বিজেপি ও আরএসএসের নেতারা যুক্ত। তাদের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত মন্ত্রক ও দফতর থেকে পাঁচজন করে কর্মীকে সরকারি খরচে পাঠাতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক গত ১৮ জুলাই নির্দেশিকা জারি করেছে।
কেন এই নির্দেশিকা, তা নিয়ে সরকারি মহলে এখন জল্পনা তুঙ্গে। প্রশ্ন উঠেছে, এমনিতেই যখন কেন্দ্রীয় সরকারের রাজকোষে টানাটানি, খরচের বন্দোবস্ত করতে পেট্রল-ডিজ়েলে শুল্ক বসাতে হচ্ছে, তখন সরকারি অর্থ খরচ করে কর্মীদের কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য শেখাতে পাঠানো হচ্ছে কেন? তা-ও বেসরকারি সংস্থার আয়োজিত সম্মেলনে!
‘নবজীবন’-এর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই সংস্থার প্যাট্রন বিজেপি নেতা সি পি ঠাকুর। বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। সংস্থার মেন্টরের পদে রয়েছেন সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন, বিজ্ঞান ভারতী-র জাতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত সহস্রবুদ্ধে। জাতীয় আয়ুষ সম্মেলন-এর ‘লিডারশিপ’-এর পদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল রয়েছেন বলেও প্রচার পুস্তিকায় দাবি করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, দু’সপ্তাহ আগে অর্থ মন্ত্রকের নির্দেশিকা জারির পর থেকেই প্রতিটি মন্ত্রক থেকে পাঁচজনের নাম নথিভুক্ত করার কাজ চলছে। কিন্তু মন্ত্রকের কর্তাদের প্রশ্ন, অর্থমন্ত্রী বাজেট থেকে বিভিন্ন মন্ত্রকের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করেছেন, তার থেকে কীভাবে একটি বেসরকারি সংস্থার সম্মেলনের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা যায়? মন্ত্রকের কাজের সঙ্গে তো এর কোনওসম্পর্কই নেই।
বিভিন্ন মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা সম্মেলনের প্রচার পুস্তিকা দেখেও বিস্মিত। কারণ, সেখানে বলা হয়েছে, কীভাবে একশো বছর যৌবন, সুস্থ শরীর ও সৌন্দর্য ধরে রেখে বেঁচে থাকা যায়, তার হদিস মিলবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডায়াবেটিস সারিয়ে দেওয়ার দাবি করা এক চিকিৎসকও সেখানে হাজির থাকবেন।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, অর্থ মন্ত্রকের সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘কমপিটেন্ট অথরিটি’ বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেই নির্দেশিকাকে হাতিয়ার করে জাতীয় আয়ুষ সম্মেলনের তরফে সমস্ত মন্ত্রককে চিঠিও পাঠিয়ে পাঁচজন অফিসার-কর্মীকে মনোনীত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।