গত কাল ও আজ কয়েক হাজার পড়ুয়া পাশের রোমানিয়া, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, মলডোভায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। তাঁরা ভারতে ফেরার বিমান ধরার অপেক্ষায় রয়েছেন।
ফাইল চিত্র।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে হাঙ্গেরির মাধ্যমে পড়ুয়াদের ফেরানোর কাজ শেষ পর্যায়ে বলে ইঙ্গিত দিল বিদেশ মন্ত্রক। আজ ইউক্রেনে আটকে থাকা সমস্ত ভারতীয়কে তাঁদের সম্পর্কে যথা সম্ভব তথ্য ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসকে জানাতে বলা হয়েছে। এ দিকে বিরোধীদের অভিযোগ, এখনও বহু সংখ্যক ভারতীয় ইউক্রেনে রয়ে গিয়েছেন। কিন্তু দেশে ভোট শেষ হওয়ায় উদ্ধারকার্য গুটিয়ে আনার চেষ্টা করেছে মোদী সরকার। ইউক্রেনের সুমিতে এখনও আটক রয়েছেন ভারতীয় পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ। বিদ্যুৎ, খাবার ও জলের অভাব পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলেছে। তবে এ দিন ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে জানানো হয়েছে, সুমি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরের পোলটাভা শহরে হাজির রয়েছে দূতাবাসের দল। তারা সুমিতে আটক পড়ুয়াদের পশ্চিম ইউক্রেন সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘সেফ প্যাসেজ’-এর তত্ত্বাবধান করছে। পড়ুয়াদের দ্রুত সুমি ছাড়ার জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।
আজ দুপুরে ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি টুইটে জানানো হয়, যে সমস্ত ভারতীয় ইউক্রেনে আটকে রয়েছেন তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে একটি ফর্ম ভর্তি করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ওই ফর্মটির মাধ্যমে আটকে থাকা ব্যক্তির নাম, ই-মেল, ফোন নম্বর, ইউক্রেন ও ভারতের ঠিকানা, পাসপোর্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ওই ফর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোন এলাকায় আটকে রয়েছেন তা-ও বিস্তারিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছে। সাউথ ব্লকের ব্যাখ্যা, দ্রুত উদ্ধার কাজ শেষ করার পক্ষপাতী নয়াদিল্লি। তাই ঠিক কত জন ভারতীয় এই মুহূর্তে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় আটকে পড়েছেন তা জেনে নিতেই ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে থাকা ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে আজ টুইট করে জানানো হয়, হাঙ্গেরি থেকে ‘অপারেশন গঙ্গা’-র অন্তিম পর্ব শুরু হয়েছে। যে সমস্ত পড়ুয়া নিজেদের ব্যবস্থা করা থাকার জায়গায় রয়েছেন তাঁদের বেলা দশটা থেকে বারোটার মধ্যে বুদাপেস্টের হাঙ্গেরি সিটি সেন্টারের সামনে উপস্থিত থাকতে বলা হচ্ছে। সাউথ ব্লক সূত্রে জানানো হয়, হাঙ্গেরি থেকে অধিকাংশ পড়ুয়াকে উদ্ধারের কাজ শেষ। তাই ওই দেশ থেকে আপাতত অপারেশন গঙ্গা-র উড়ান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যারা বাকি ছিলেন তাঁদের জন্য আজ দিল্লিগামী ছ’টি বিমান বুদাপেস্ট থেকে ছেড়েছে। আগামিকাল আরও পাঁচটি বিমান বুদাপেস্ট থেকে ভারতের দিকে রওনা দেবে। যার মধ্যে দু’টি আসবে মুম্বই। বাকি তিনটির গন্তব্য দিল্লি।
এখনও কয়েকশো ভারতীয় পড়ুয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে আটকে রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে সুমিতে আটক পড়ুয়াদের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। ক্রমাগত বোমাবর্ষণের ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে পানীয় জলটুকুও জুটছে না আটক পড়ুয়াদের। নেই পর্যাপ্ত খাবার। চার দিন আগে সুমি থেকে পড়ুয়াদের বার করে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখনও সেই কাজ শুরু করা যায়নি।
গত কাল ও আজ কয়েক হাজার পড়ুয়া পাশের রোমানিয়া, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, মলডোভায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। তাঁরা ভারতে ফেরার বিমান ধরার অপেক্ষায় রয়েছেন। আজ অপারেশন গঙ্গা-বন্ধ করে দেওয়ার টুইট ঘিরে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে পড়ে। আটকে থাকা ভারতীয়দের নিয়ে প্রশ্ন করেন অনেকেই। পরে বুদাপেস্টের ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষে জানানো হয়, কেবল হাঙ্গেরিতেই ‘অপারেশন গঙ্গা’র শেষ পর্বের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি এলাকায় কাজ চালু থাকবে। বিমান মন্ত্রক সূত্রে খবর, এ দিন ইউক্রেনে আটকে থাকা ২১৩৫ জন ভারতীয়কে ১১টি বিমানে দেশে ফেরানো হয়েছে। আগামিকাল ইউক্রেনের সীমান্ত লাগোয়া দেশ থেকে আটটি বিমানে ১৫০০ ভারতীয়কে ফেরানো হবে। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে পাঁচটি, রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ট থেকে একটি ও রোমানিয়ারই সুচাভা থেকে একটি বিমান রওনা হবে। ফলে কেবল পিসোচিন ও সুমির পড়ুয়াদের দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ বাকি থাকবে।