প্রতীকী ছবি।
উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং তার হাত ধরে মূলত সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নতুন ব্যবসা শুরু করা সংস্থাগুলিকে (স্টার্ট-আপ) উৎসাহ দিতে ড্রোননীতিতে বড়সড় পরিবর্তন আনল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
যেমন, এত দিন ড্রোনে ৩০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত পণ্যসামগ্রী বহনে ছাড় ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সরকার যে নতুন নিয়ম ঘোষণা করল, তাতে তা বেড়ে হচ্ছে ৫০০ কিলোগ্রাম। একই সঙ্গে, ভারী পে-লোড বহনকারী ড্রোন ও ড্রোন-ট্যাক্সির ব্যবহারকে সবজু সংকেত দেওয়া হয়েছে। এত দিন ড্রোনের জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ছাড়পত্রের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন নথিভুক্তি বা লাইসেন্সের জন্য তা নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। কমানো হয়েছে ড্রোন ব্যবহারের লাইসেন্স পেতে গুনতে হওয়া টাকার অঙ্কও।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না তো? সম্প্রতি ড্রোন ব্যবহার করে কাশ্মীরে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। নিরাপত্তা সংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়ার নিয়ম আরও ঢিলেঢালা হলে, ওই ধরনের আক্রমণ (এমনকি জনবহুল অঞ্চলে) যে বাড়বে না, সেই বিষয়টি কী ভাবে নিশ্চিত করবে কেন্দ্র? অনেকের প্রশ্ন, পাকিস্তান থেকে ‘শত্রু ড্রোনের’ আনাগোনা সম্প্রতি যেখানে বেড়েছে, সেখানে এই ‘উদার নীতি’ দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের জন্য শেষে বুমেরাং হবে না তো? কেন্দ্রের দাবি, নিরাপত্তার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোন কোন এলাকায় ড্রোন চালানো যাবে না, সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
নতুন ড্রোননীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য, এই নীতির ভিত বিশ্বাস এবং স্বশংসাপত্র। তাঁর দাবি, ‘‘বিভিন্ন স্টার্ট-আপ এবং এই ক্ষেত্রে যুব সমাজের যে অংশ কাজ করছে, এই নীতি তাদের উৎসাহিত করবে। খুলে দেবে উদ্ভাবন ও ব্যবসার নতুন দিক। উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়ে এর দৌলতে ড্রোন হাব হয়ে উঠতে পারে ভারত।’’
বিমান মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, আজকের সিদ্ধান্তের ফলে ড্রোন চালাতে এত দিন যে ইউনিক অথরাইজেশন নম্বর, ইউনিক প্রটোটাইপ আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, আমদানির ছাড়পত্র, অপারেটর-পারমিট, রক্ষণাবেক্ষণের ছাড়পত্র ইত্যাদি নিতে হত, তা বাতিল করা হয়েছে। ড্রোন ওড়াতে যেখানে ৭২ ধরনের ফি দিতে হত, তা কমে হচ্ছে চার। বড় ড্রোনে রিমোট পাইলট লাইসেন্স ফি-ও ৩,০০০ টাকা থেকে কমে হচ্ছে ১০০ টাকা। স্বাগত জানানো হয়েছে বিদেশি লগ্নিকেও।
বিমান মন্ত্রক জানিয়েছে, ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে যে ডিজিটাল ‘স্কাই প্ল্যাটফর্ম’ থাকবে, তা মূলত তিন ভাগ (সবুজ, হলুদ ও লাল) করা হবে। সবুজ জ়োনে ড্রোন ওড়াতে অনুমতি লাগবে না। আগে বিমানবন্দর সংলগ্ন ৪৫ কিলোমিটার এলাকা হলুদ জ়োন হিসেবে চিহ্নিত করা হত। তা কমিয়ে আনা হচ্ছে ১২ কিলোমিটারে। বাণিজ্যিক ব্যবহার না করা হলে, মাইক্রো-ড্রোনের ক্ষেত্রে কোনও পাইলট শংসাপত্রের প্রয়োজন নেই বলেও জানানো হয়েছে।
পণ্য সরবরাহের জন্য আলাদা ড্রোন করিডোর তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙলে, সর্বাধিক জরিমানা ১ লক্ষ টাকা। অনুমোদিত ড্রোন স্কুলের মাধ্যমে তা ওড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া ও পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্র।