ফাইল চিত্র।
সতেরো বছর আগে শ্রীলঙ্কায় মাহিন্দা রাজাপক্ষে ক্ষমতা দখলের পর যে কূটনৈতিক জমি হারিয়েছিল ভারত, আজ সে দেশের মারাত্মক সঙ্কটে তা ফিরে পাওয়ার সুযোগ এসেছে বলে মনে করছে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার কূটনৈতিক মহল।
এটা ঘটনা যে, গত দু’মাস ধরে ‘রাজাপক্ষে হঠাও’ স্লোগানের সঙ্গে মিশে থেকেছে ভারত-বিরোধী প্রচারও। কিন্তু দিল্লি যে ভাবে গত কয়েক মাসে কলম্বোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে ধীরে ধীরে হলেও ভারত সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি সে দেশের মানুষের মধ্যে বদলাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সে দেশের প্রধান বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমদাসার কণ্ঠে ভারতের প্রশংসাও শোনা গিয়েছে, যাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। প্রেমদাসা বলেছেন, “ভারত একটি বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এই মহা বিপদের সময়। দেশ এক আপৎকালীন অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছে। ভারত এগিয়ে এসেছে সমর্থনের জন্য।”
ভারত বরাবরই বাণিজ্যে কলম্বোর বড় শরিক। ২০০৫ সালে রাজাপক্ষে সরকার আসার পর ধীরে ধীরে চিনের সঙ্গে বড় বড় পরিকাঠামো প্রকল্প তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা। দক্ষিণ শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দরটি কুক্ষিগত করে চিন। সে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের দশ শতাংশ একা চিনেরই। শ্রীলঙ্কার সমাজকর্মী মেলানিয়া গুণতিলকে জানাচ্ছেন, “ভারত এই বিপদে যে ভাবে সহানভূতি এবং সৌভ্রাত্র দেখিয়েছে তা অকল্পনীয়। ঠিক সময়ে খাদ্য এবং জ্বালানি পাঠানো হয়েছে। নয়তো পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যেত।”
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের এ ভাবে শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়ানোর কৌশলগত তাৎপর্যও যথেষ্ট। যা এই মুহূর্তে প্রতিবেশী বলয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছেও ভারতের দর কষাকষির সুযোগটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। জানুয়ারি মাসে প্রথম বার ভারত স্বল্প সুদে শ্রীলঙ্কাকে ঋণদানের কথা ঘোষণা করার পর, দু’টি দেশ এমন একটি বিষয়ে যৌথ চুক্তি করে, যার জন্য তিন দশক ধরে অপেক্ষা করছিল সাউথ ব্লক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উত্তর-পশ্চিম ত্রিঙ্কোমালি বন্দরে ৬১টি অতিকায় তেলের ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল। ব্রিটিশ জমানায় তৈরি ওই ট্যাঙ্কগুলি নিজেদের অশোধিত তেল মজুতের কাজে ব্যবহার করার জন্য ভারত তিরিশ বছর চেষ্টা করেছে। অবশেষে জানুয়ারিতে ভারত এই ট্যাঙ্ক ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। শ্রীলঙ্কার বামপন্থী দল ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির সাংসদ হারিনি অমারাসুরিয়া এ ব্যাপারে বলেছেন, “কোনও দেশই নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে কাউকে সাহায্য করে না। ভারতও অবশ্যই নিজের সুবিধাটা দেখবে! তাতে সমস্যা কোথায়?” ভারতের মতো শ্রীলঙ্কারও উচিত নিজেদের জন্য কোনটা সবচেয়ে ভাল তা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া, বলেন তিনি।